রাতের আঁধার আলো করে রাতেই ঝরে যায় যে ফুল তার নাম নাইট কুইন বা রাতের রানী…. নিশিতেই দেখা মেলে আবার রজনী পোহাবার পূর্বেই হারিয়ে যায়….. সৌন্দর্য, সুবাস আর নান্দনিক বৈশিষ্ট্যে অনন্য একটি ফুল নাইট কুইন….. সাধনা ধৈর্য্য অপেক্ষা আর সৌভাগ্যের সংমিশ্রণ ঘটলেই এই বিরল ঘরানার ফুলের দেখা মিলবে … পৃথিবীর অনেক দেশে সৌখিন মানুষেরা নাইট কুইন ফোটার ক্ষণটি স্মরণীয় রাখতে উৎসবের মত ঘরোয়া আয়োজন করে ….
মান্না দে’র সেই অপূর্ব গান,
আমি যে জলসা ঘরে বেলেয়াড়ি ঝাড়
নিশি ফুরালে কেহ চায় না আমায় জানিগো আর….
সত্যিই অনেকটা ঝাড়বাতির মত চতুর্দিকে পাপড়ি ছড়িয়ে আলোয় আলোকিত করে ফোটে এই দুর্লভ ফুল…. রাতের শুরুতে একটু একটু করে খোলস ছেড়ে লম্বা ডগার আগায় গোলাকৃতির মত কলি থেকে আস্তে আস্তে পাপড়ি মেলে এই নাইট কুইন….. মাঝখানে পরাগ ছড়ানো সাদা রং এর পাপড়ি যত রাত গভীর হয় তত মেলতে থাকে আর উজ্জ্বলতা ছড়ায় এবং সুগন্ধিও রাতের গভীরতার সাথে বিস্তৃত হতে থাকে….. গন্ধটি মিষ্টি তবে তীব্র নয়, কিন্তু কী যেন একটা মাদকতা রযেছে ……
সেই যে জলসা ঘরে রাতের রানী ঘুঙ্ঘুর পায়ে ধীরে ধীরে আলতো ভঙ্গিমায় পায়ে পায় যেমন ছন্দ তোলে, ছন্দ সময়ের সাথে সাথে যেমনি তার পরিপূর্ণ তাল-লয়-মাত্রায় পৌঁছে নাইট কুইন ফুলও তেমনি রাত বাড়ার সাথে তাল মিলিয়ে খোলস ছেড়ে পরিপূ্র্ণ রুপে বিকশিত হয়….
ক্যাকটাস প্রজাতির এই ফুল, এটি মূলত আমেরিকার দক্ষিণে ও মেক্সিকো অঞ্চলের ফুল…. ফুলপ্রেমিদের তৎপরতায় ইন্ডিয়া হয়ে এখন বাংলাদেশের সৌখিন বাগানীদের অনেকেরই বাসাতেই এই নাইট কুইনের দেখা মিলে…. সচরাচর এবং সহজে এই ফুলের দেখা পাওয়া যায় না… বছরখানিক বা দুইবছর একটি চারা পরিচর্যা করলে ফুলের দেখা মিলতে পারে… আমাদের দেশে বছরে সাধারণত বর্ষা ঋতুতে ফোটে, ভাগ্য অনুকূলে থাকলে অন্য সময়েও সফলতা আসতে পারে …. আমি সৌভাগ্যবান, গত ১৮ মাসে দুটি পৃথক গাছে ৩ বার ফুল পেলাম …
বারান্দায় রাখা গাছটি কিছুটা দুর্বল ও স্বাস্থ্যহীন হয়ে যাওয়ায় মাসখানিক আগে ছাদে শেডে রেখেছিলাম ….পর্যাপ্ত পুষ্টির যোগান রোদ বৃষ্টিতে গাছটি তরতাজা হয়েছিল ক’দিন ধরেই দেখছিলাম …. গতকাল দেখলাম কলি বের হয়েছে …. আজ বিকেলেই ছাদে সন্দেহ হয়েছিল মাহেন্দ্রক্ষণটি আজ রাতেই . …. গাছটি ঘরে আনতে ভুলে গে’ছিলাম ।
রাতে বাংলাদেশের খেলা শেষে হঠাৎ মনে পড়লো, টর্চলাইট নিয়ে ছাদে গেলাম, ভুতের ভয়ে অন্য কেউ আমার সঙ্গী হলো না …. ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভুতেরা আবার ফুল পছন্দ করে, রাতের রানীর দখল তারা কিছুতেই ছাড়বে না আর আমিও সৌন্দর্যের পূজারী…. রাতের এই জলসাটা মিস করতে রাজি নই …. ওদেরকে কয়েকটা চটকানি দিয়ে যুদ্ধ জয়ের স্পিরিটে নিয়ে আসলাম রাতের রানীকে !
অনেকটা রাত জাগতে হবে ওর সৌন্দর্য আর রুপের মাধুরীর শেষ নির্যাস নিংড়ে নিতে ….
ভোররাতের কিছু পূর্বেই সে মুখ গোমরা করতে শুরু করবে, ভোর রাতের দিকে বিগতাযৌবনা নারীর মত সে জৌলুস হারাবে ….
সত্যিই বিচিত্র এই ফুল…. আমার ঘরখানা তার মিষ্টি সুবাসে এখন মাতোয়ারা…..
মিষ্টি একটা গন্ধ রয়েছে ঘরটা জুড়ে…
(ফেসবুক ওয়াল থেকে)
খুলনা গেজেট/এনএম