সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত ১৬ জুলাই শিক্ষকের মারপিটের পর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজপ্রতাপ দাসের (১৫) মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ এনে থানায় একটি এজাহার দাখিল করা হয়েছে।
নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য নলতা ইউনিয়নের ইন্দ্রনগর গ্রামের মরহুম এলাহী বক্স পাড়ের ছেলে আব্দুল জব্বার পাড় বাদী হয়ে থানায় এই এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতানামা ১৫০ থেকে ২শ’ জনকে আসামী করা হয়েছে।
বাদীর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৬ জুলাই রোববার সকাল ১০ টার দিকে নলতা মধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির কিছু উচ্ছৃংখল শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের বর্ধিত ভবনের ৩য় তলায় কেক কেটে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে শিক্ষার্থীর জন্মদিন পালন করে এবং হৈ-হল্লা করে। বিষয়টি জানতে পেরে ২/১ জন শিক্ষক বাধা প্রদান ও বকাবকি করলে ১ জন শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয় এবং পরে বেলা ২ টার দিকে মৃত্যুবরণ করে। উক্ত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও স্কুলের সুনাম নষ্ট করার জন্য উস্কানিমূলক ভাবে আসামীরা বেলা আড়াইটার দিকে দা, লাঠি, লোহার রডসহ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসহ স্কুলে অনধিকার প্রবেশ করে। এসময় তারা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে সমাজের বুকে শিক্ষকদের হেয় পতিপন্ন ও মানহানি করে। কয়েকজন স্কুলের অফিস কক্ষে অনধিকার প্রবেশ করে সিনিয়র শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খাঁকে চড়, কিল, ঘুষি, লাথি মারতে মারতে স্কুলে গেটে নিয়ে যেয়ে আবারও বেধড়ক মারপিট করে। তারা প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষের আসবাবপত্র, কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে। এছাড়াও তারা ১০ টি শ্রেণিকক্ষের জানালার থাইগ্লাস, ফ্যান, দরজা ও আসবাবপত্র, ডিজিটাল স্মার্ট বোর্ড, এসি ভাঙচুর করে ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। এসময় শিক্ষকদের ব্যবহৃত ৮ টি মোটরসাইকেল ও ২ টি সাইকেল ভাঙচুর করে ২৪ লক্ষ টাকার ক্ষতির পাশাপাশি শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ও পরিতোষ চক্রবর্তীর ২টি মোটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে আরো ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুর রহমান নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের এক সদস্যের দায়েরকৃত লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয় বিধায় এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, শিক্ষকের মারপিটের কারণে নাকি অন্য কোন করণে রাজপ্রতাপ দাশের মৃত্যু হয়েছে তা নিয়ে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। যে মৃত্যুকে ঘিরে নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার সঠিক কারণ জানতে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক, এলাকাবাসী ও সচেতন মহল অপেক্ষা করছেন ময়না তদন্তের রিপোর্টের জন্য।
নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আহছান কবির টুটুল জানান, গত ১৬ জুলাইয়ের ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে রোববার (২৩ জুলাই) সকাল ১০ টায় বিদ্যালয়ে অভিভাবক সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। এ সম্মেলনে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সাতক্ষীরা-৩ আসনের এমপি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা.আ ফ,ম রুহুল হক, পরিষদের সদস্য ও শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
খুব শীঘ্রই বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে পরিচালনা পরিষদ , শিক্ষকমন্ডলী ও অভিভাবকসহ স্থানীয়রা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
খুলনা গেজেট/কেডি