সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় তৈরী হচ্ছে উন্নতমানের সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ। প্রতি মাসে প্রায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার গজ ব্যান্ডেজ উৎপাদন হয় এখানে। নলতায় উৎপাদিত উন্নতমানের এই সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এটি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করাও সম্ভব বলে জানান তাঁতীরা। নলতার তাঁতশিল্পকে আরো আধুনিক ও উৎপাদিত পন্য রপ্তানির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক।
জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার তাঁতীপল্লী নামে খ্যাত নলতা গ্রামে গড়ে উঠছে ছোট বড় মিলে প্রায় দুই হাজার বিদ্যুৎ চালিত পাওয়ারলুম। যেখানে দিনে রাতে উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ। আর এসব গজ ব্যান্ডেজ চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ পেশার সাথে জড়িয়ে অন্তত ১০ হাজারের অধিক মানুষের সরাসরি জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।
বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড নলতা কালিগঞ্জ,সাতক্ষীরা অফিসের লিয়াজো অফিসার মোঃ জিলান উদ্দিন জানান, সর্বশেষ সরকারী হিসাব অনুযায়ী নলতা গ্রামে ১ হাজার ৭৬৩টি উৎপাদিত বা স্বচল পাওয়ারলুম এবং ৪৩টি হাতে টানা তাঁত রয়েছে। যেখানে উৎপাদিত হচ্ছে সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ। এখানকার উৎপাদিত সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ দেশের সর্বত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। এটি যাতে আরো মানসম্মত ও আধুনিক করা যা সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঋন সুবিধাও দেয়া হচ্ছে তাঁতীদের। ইতিমধ্যে ২০২১-২২ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ১ কোটি টাকার উপরে ঋন সহায়তা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে গত অর্থবছরে ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং চলতি অর্থবছরে ১২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে যা চলমান। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত সরকারের তাঁতীদের জন্য আর্থসামাজিক অবস্থার চলতি মুলধন সরবরাহ ও তাঁতের আধুনিকায়ন প্রকল্পের অধিনে এসব ঋন দেয়া হচ্ছে। তবে আগামীতে এটি রপ্তানির জন্য খুবই সম্ভবাবনাময় বলে জানান তিনি।
সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্টান নলতার ড্যাফোডিলস্ ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ওয়াক¯্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ টুটুল হোসেন জানান, ৪০টি বিদ্যুৎচালিত তাঁতে অর্ধশতাধিক শ্রমিক গজ ব্যান্ডেজ উৎপাদন করছে। উৎপাদিত পন্য রাজধানী ঢাকাতে সরবরাহ করেন। এর আগে ইউরোপ আমেরিকায় রপ্তানিও করেছেন। তার উৎপাদিত গজ ব্যান্ডেজ সর্বশেষ রপ্তানি করেন ২০১২ সালে। পরবর্তীতে দেশের অস্থীশীল পরিস্থিতির কারনে বন্ধ হয়ে যায়। এর পর ধারবাহিক ভাবে সুতা ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ার কারণে আর রপ্তানি করা সম্ভাব হয়নি।
তিনি বলেন, ৬৮ টাকা পাউন্ডের সুতা এখন কিনতে হচ্ছে ১৫২ টাকা প্রতি পাউন্ড। তাছাড়া অন্যান্য কাঁচামালের দামও বেশি। তার পরও এটি রপ্তানি করা সম্ভব যদি সরকারের পৃষ্টপোষকতা পাওয়া যায়। এ জন্য উদ্যোক্তাদের চাহিদা মাফিক ঋন সুবিধা দিতে হবে। তিনি বলেন, তাঁতবোর্ডের অধিনে ক্ষুদ্র তাঁতীদের জন্য এক থেকে দেড় লাখ টাকা ঋন দেয়া হয়। আসলে এই পরিমান অর্থ দিয়ে কিছুই করা যায়না। ফলে বড় পরিসরে ঋন সুবিধা পেলে আরো ভালো উৎপাদন ও রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
নলতার গজ ব্যান্ডেজ সরবরাহকারী প্রতিষ্টান বগুড়ার মেসার্স এফ এম ট্রের্ডাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল হাকিম কাজল জানান, নলতার সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজের ব্যাপক চাহিদা দেশ জুড়ে। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করছেন তার প্রতিষ্টান। শুধু তাই এটি শীঘ্রই দেশের বাইরে রপ্তানি করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
ঢাকার মোহাম্মাদপুর এলাকার বি এস সার্জিক্যালের স্বত্তাধিকারী আদিত্য নন্দি জানান, গত তিন থেকে ৪ বছর যাবত তিনি সাতক্ষীরার নলতার গজ ব্যান্ডেজ সরবরাহ করেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। তার মত আরো কয়েকটি প্রতিষ্টান সাতক্ষীরার নলতা থেকে গজ ব্যান্ডেজ এনে ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্টানে সরবরাহ করে। নলতা থেকে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকার গজ ব্যান্ডেজ সরবররাহ হয় ঢাকাতে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, নলতা গ্রামে উৎপাদিত সার্জিক্যাল গজ ব্যান্ডেজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে। যা এ জেলার জন্য খুবই সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। আগামীতে এ গজ ব্যান্ডেজ যাতে দেশের বাইরে রপ্তানি করা যায় সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সবধরনের ব্যবস্থার করবে।
তিনি বলেন, তাঁতশিল্প আমাদের দেশের অনেক ঐতিয্যবহন করে। নলতা গ্রামের তাঁতীরা যাতে আরো আধুনিক উপায়ে ও বিশ্বমানের গজ ব্যান্ডেজ উৎপাদন করতে পারেন সে দিকেও প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে বলে জানান তিনি।