খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

নবীজি (সা.) র মে’রাজ ও আমাদের শিক্ষা

মুফতি জুবায়ের হাসান

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর এই ঘটনাটি মোটামুটি আমরা সবাই জানি, কিন্তু ঘটনাটির মাঝে একটি গুরত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে। ইনশাল্লাহ, সেই বিষয়েই এখানে আলোকপাত করব। আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত, জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা:) এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

রাসূল (স:) মিরাজ থেকে ফিরে এসেছেন। সকালবেলা তিনি যখন মক্কার কুরাইশদের মিরাজের ঘটনাটি বললেন তখন কুফ্ফার সম্প্রদায় হাসি-তামাশায় লিপ্ত হয়েছিল। মক্কার এই কুরাইশ সম্প্রদায়ের কুফ্ফারগণ ছিলেন অনেকটা বস্তুববাদি। যা দেখা, যায় ধরা যায়, ছোয়া যায় শুধু তাই তারা আমলে নিত। রাসূল (স:) এর মিরাজের ঘটনাটিকে তারা একটা হাতিয়ার হিসেবে ধরে নিল আর এর মাধ্যমে মিরাজের ঘটনাটিকে মিথ্যা প্রমাণ করতে চাইল। কুফ্ফার সম্প্রদায়ের কিছু লোক আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর নিকট গেলেন। তিনি বাণিজ্য থেকে কিছুক্ষণ আগে ফিরে এসেছেন, তাই তখনও রাসূল (স:) এর সাথে দেখা করতে পারেননি। কুফ্ফার সম্প্রদায় তাকে বলল, শুনেছ কি তোমার সঙ্গী কি সব বলা শুরু করেছে ? সে বলছে, সে নাকি এক রাতের মধ্যে মক্কা থেকে বাইতুল মাকদাস(জেরুজালেম) যেয়ে আবার মক্কায় ফিরে এসেছে।

আবু বকর (রা:) বললেন, এই কথাগুলো কি তিনি বলেছেন ? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ। এরপর আবু বকর (রা:) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্য বলেছেন। কুফফার সম্প্রদায়ের বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠে গেল। তারা বলল, তুমি বিশ্বাস কর সে বৃহত্তর সিরিয়ায় যেয়ে আবার এক রাতের মধ্যে ফিরে এসেছে! আবু বকর (রা:) বললেন, আমি তাকে বিশ্বাস করি বরং এর চেয়েও বেশী বিশ্বাস করি ঐসব বিষয়ে যেগুলো তাঁর নিকট ওহী হিসেবে এসেছে। মোটামুটি এই ঘটনাটুকু আমরা সবাই জানি, কোন বইতে পড়ে কিংবা কারো নিকট থেকে এই ঘটনা শুনে আমরা পুলকিত হই কিন্তু এই ঘটনার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি হিকমা রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই নজর এড়িয়ে গেছে।

কুফ্ফার সম্প্রদায় যখন আবু বকর (রা:) কে রাসূল (সা:) এর মিরাজ সম্পর্কিত কথাটি বলল তখন, আবু বকর (রা:) এর যদি দূর্বল ঈমান থাকত তাহলে তিনি বলতেন, না এই ঘটনাটি সত্য নয় অথবা, আবু বকর (রা:) যদি এমন হতেন যাকে খুব সহজেই কথার চাতুরী দ্বারা অভিভুত করা যায় তাহলে তিনি বলতেন ঘটনাটি সত্য। আবু বকর (রা:) চমৎকারভাবে উত্তর দিয়েছিলেন, মাশাল্লাহ। তিনি ঘটনাটি শুনেছেন কুফ্ফারদের নিকট থেকে আর তাই আবু বকর (রা:) বললেন, যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্য বলেছেন।

এর দুইটি অংশ রয়েছে, প্রথমত, ‘যদি তিনি সত্যিই বলে থাকেন’ – মুহাদ্দিসিনে কেরাম এই পদ্ধতিতে কাজ করেন, অর্থাৎ যদি সত্যিই রাসূল (স:) এর নিকট থেকে আসে- দ্বিতীয়ত, তাহলে তা সত্য। সেটা হচ্ছে ওহি, আল্লাহর নিকট থেকে রাসূল (স:) এর উপর নাযিলকৃত। অর্থাৎ জাল হাদীস ও ভুল বর্ণনা পরিত্যাগ করা। রসূলুল্লাহ (স:) থেকে সহীহ সনদে হাদীস পাওয়া গেলে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা, সেই অনুযায়ী আমল করা ঈমানী দায়িত্ব, কারণ সেটা এক প্রকার ওহি। এমন কথা বলা যাবে না যে, এটা তো আমার যুক্তিতে টিকল না বা আমার বুঝে আসে না ইত্যাদি।

বরং আবু বকর সিদ্দীক (রা:) এর এই ঘটনা থেকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এটাই, রাসূল (স:) এর কথা সহীহভাবে আমাদের নিকট পৌছালে বিনা বাক্য ব্যয়ে তা মেনে নিতে হবে, তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। সেটা আমার নিকট যুক্তিতে টিকুক আর না টিকুক, অন্যান্য লোকজন সেটা মানুক আর না মানুক আমাকে রাসূল (স:) এর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতেই হবে এবং তার যথাসাধ্য অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের রাসূল (স:) এর সাহাবীদের মতো করে দ্বীন ইসলামকে বুঝার তৌফিক দান করুন এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন। (লেখক : ইমাম ও খতিব, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)

খুলনা গেজেট/এ হোসেন

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!