খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ পৌষ, ১৪৩১ | ৬ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  মারা গেলেন অভিনেতা প্রবীর মিত্র
  সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাস আটক

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ছয় বছরে প্রয়োজন ৮৭ হাজার কোটি টাকা

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশ ২০২৩ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চাইলে দেশীয় বাণিজ্যিকগুলোকে সৌর ও বিদ্যুত প্রকল্পে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এক গবেষণায় বলা হয়, জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আগামী ছয় বছরে ৮৭ হাজার কোটি টাকার মত বিশাল বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। যদিও বর্তমান বিনিয়োগ প্রবণতা হতাশাজনক, কারণ গত ছয় বছরে এই খাতে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
দেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাত হতে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। বর্তমান নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা (সৌর, বায়ু ও জল বিদ্যুৎ) মাত্র ৮৯৩ মেগাওয়াট বা ৩ দশমিক ২ শতাংশ। লক্ষ্য পূরণের জন্য এখুনি কমপক্ষে ২৪ হাজার কোটি বিনিয়োগের প্রয়োজন, যা একেবারেই অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকায় সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ (সিইপিআর), ক্লিন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম -ইআরএফ আয়োজিত এক সেমিনারে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ইআরএফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘র‌্যাপিড ট্রানজিশন টু রিনিউয়েবলনস: রোল অব ডমেস্টিক ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন’ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ প্রেসিডেন্ট মোহম্মদ রেফায়েতউল্লাহ মৃধা। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সেমিনারটি পরিচালনা করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানী উপদেষ্টা মোহম্মদ ফওজুল করিম খান। প্যানেল আলোচক ছিলেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিডব্লিউজিডি’র হাসান মেহেদী এবং দি সিটি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ আশানুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিইপিআর-এর গৌরাঙ্গ নন্দী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, সবুজ অর্থায়ন বা গ্রীন ফাইনান্সিংয়ে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প, জ্বালানি দক্ষতা প্রকল্প, তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রকল্প রয়েছে। সর্বশেষ ৬ বছরে দেশীয় ব্যাংকগুলো এই ধরনের প্রকল্পে ৭৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। অবশ্য, এই অর্থের অতি সামান্য মাত্র তিন শতাংশেরও কম নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। গবেষণায় স্বতন্ত্র নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে ব্যাংকের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তির অনুপস্থিতি, ব্যাংকের জন্য উপযোগী প্রকল্প তৈরিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন উদ্যোক্তাদের দক্ষতার অভাব, ছোট আকারের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে প্রণোদনার ঘাটতি। অবশ্য, বর্তমান সরকার কর অব্যাহতির মেয়াদ ১০ বছর করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকারীদের বেশ বড় ধরণের প্রণোদনা দিয়েছে। যেসব কোম্পানি ২০২৫ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে তারা এই কর অব্যাহতির সুবিধা পাবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহম্মদ ফওজুল কবির খান বলেন, জ্বালানী ক্ষেত্রে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে যাওয়ার বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে যাওয়ার জন্য সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে ট্যাক্স বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, ওপেন টেন্ডারিং যাওয়া হচ্ছে, নেট মিটারিং পদ্ধতি যাতে আরও কার্যকর হয় সেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিন আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে কয়েকটি বিভ্রান্তি রয়েছে, যার অন্যতম একটি হচ্ছে, প্রয়োজনীয় জমি নেই। বিষয়টি একেবারেই সত্যি নয়। সরকারের মালিকানায় প্রচুর জমি আছে, এক রেল বিভাগের হাতে যে জমি আছে, তাতেই আমরা প্রয়োজনের অনেকটা পূরণ করতে পারি। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানী নীতিমালা গ্রহণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যাবো। ভর্তুকি কমাতে হবে। অতীতে উন্নয়নের নামে অর্থের অপচয় করা হয়েছে। যেকোন উন্নয়ন জনগণের কল্যাণে না করলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। উন্নয়নের জন্য কৃষকের কাছ থেকে জমি নিয়ে কিছুই করলাম না, এতে উন্নয়ন হয় না। টানেল, পদ্মা রেল সেতুর মত কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, যাতে টাকার ব্যয় হয়েছে, মানুষের কাজে লাগেনি
সিইপিআর-এর চেয়ারপার্সন গৌরাঙ্গ নন্দী তার মূল প্রবন্ধে বলেন, নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ২১টি ব্যাংকের দেওয়া তথ্য, ৯ জন বিশিষ্ট ব্যাঙ্কার ও খাত-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার, ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত বিবিধ নীতিমালা, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের (বাংলাদেশ ব্যাংক) বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। এ ধরণের গবেষণায় যুক্ত হওয়া নিয়ে ব্যাঙ্কগুলোর অস্বস্তি থাকায় ৬৪টি ব্যাংক হতে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি। উপরন্তু তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী, সকল ব্যাংকে তথ্য কর্মকর্তা থাকার বিধান থাকলেও মাত্র ১৭টি ব্যাংকে এই ধরণের কর্মকর্তা আছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য গবেষণার সুপাশিমালায় বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি তহবিল গঠন করা; সবুজ অর্থায়নের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়াগ করার বিধান চালু করা; নবায়নযোগ্য জ্বালানী খাতে বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। পাশাপাশি গৃহাস্থলি ও শিল্পকারখানার ক্ষেত্রে প্রাথমিক খরচ কমাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক হ্রাস ও ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!