খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

নতুন শিক্ষাক্রমের ষান্মাসিক মূল্যায়ন নিয়ে বিপাকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক

একরামুল হোসেন লিপু

নতুন শিক্ষাক্রমের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকারি এবং বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। এই নিয়ে তাদের মধ্যে ক্রমশঃ ক্ষোভ, অস্থিরতা এবং উদ্বিগ্নতা বাড়ছে।

জানা যায়, ২০২২ সাল থেকে সরকার নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে। নতুন শিক্ষাক্রমের কারিকুলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ষান্মাসিক সামষ্ঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করে।

পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, ভৌত অবকাঠামোর ব্যবস্থা না করে নতুন কারিকুলামে ষান্মাসিক সামষ্ঠিক মূল্যায়ন চালু করায় শুরুতে হোঁচট খায় নতুন এ শিক্ষা কার্যক্রম পদ্ধতি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের নির্দেশনা ছিল বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণী কক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। সেই হিসেবে বড় বড় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর আনুপাতিক হারে বিদ্যালয়গুলিতে ৫০ থেকে ৭৫ টি শ্রেণী কক্ষ এবং সমপরিমাণ শিক্ষক প্রয়োজন। যা দেশের কোন সরকারি কিংবা বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেই। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দলীয় কাজ করার জন্য যে সকল সরঞ্জামাদির প্রয়োজন সেগুলিও কোন বিদ্যালয়ে নেই।

এছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করার নিয়ম থাকলেও শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারের কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রমে বিদ্যালয়গুলিতে সোশ্যাল ল্যাব থাকা একান্ত প্রয়োজন ছিল। যেটি দেশের কোন বিদ্যালয়ে নেই। এ পদ্ধতি চালু হওয়ার ফলে শুরুতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়। জটিল এ ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের অর্থ এবং বিষয়বস্তু বুঝতে বেশ সময় ব্যয় করতে হয় ছাত্র- ছাত্রীদেরকে।

এ দিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ষান্মাসিক সামষ্ঠিক মূল্যায়ন ৩ জুলাই থেকে শুরু হয়। ১০ টি বিষয়ের মধ্যে ৪ টি বিষয়ের মূল্যায়ন দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই শেষ হয়েছে। বাকী ৬ টি বিষয়ের মূল্যায়নের শেষ দিন ধার্য ছিল ৩ আগস্ট। কিন্তু ১৭ জুলাই থেকে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয়গুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

বর্তমানে বিদ্যালয়গুলি খোলা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নতুন করে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের কোন তারিখ কিংবা নির্দেশনা আসেনি। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্রমশঃ ক্ষোভ, অস্থিরতা এবং উদ্বিগ্নতা বাড়ছে।

গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল,খুলনার সিনিয়র শিক্ষক মোঃ সাইফুজ্জামান বলেন, ৫ আগস্টের পর বিদ্যালয় খোলা হলেও শিক্ষকবৃন্দ মূল্যায়নে নতুন কোন রুটিন পাইনি। মূল্যায়নের নতুন রুটিন কিংবা এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোন নির্দেশনা না দেওয়ায় নতুনভাবে বার্ষিক মূল্যায়নের পাঠে যেতে পারছেন না বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। আবার শিক্ষার্থীরাও মূল্যায়ন শেষ না করে অন্য পাঠেও মনোনিবেশ করতে পারছে না।

এদিকে স্কুলের ষান্মাসিক সামষ্টিক নিয়ে আগে থেকেই অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ এবং ক্ষোভ ছিল। তার উপর সৃষ্ট নতুন এ জটিলতায় শিক্ষাক্রম নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।

জান্নাতুল ফেরদৌস হীরা নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। ষান্মাসিক এই যে জটিল একটা শব্দ আমাদের অভিভাবকদের উচ্চারণ করতেই কষ্ট হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এ জাতীয় শব্দ গুলো হওয়া উচিত সহজীকরণ। যাতে তারা সহজে বুঝতে পারে। ষান্মাসিক মূল্যায়ন শুরু হওয়ার পর থেকে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার সর্বনাশ শুরু হয়েছে। এই মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার চেয়ে মোবাইলের প্রতি আসক্ততা বেড়ে যায়। এই সর্বনাশা পদ্ধতি আমাদের সন্তানের একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ৪ টি বিষয়ের ষান্মাসিক মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে। বাকী ৬ টি বিষয়ের মূল্যায়নের কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না শিক্ষকরা। ৫ আগস্টের পর স্কুল খুললেও কোন ক্লাস হচ্ছে না। মূল্যায়নের রুটিন দিচ্ছে না শিক্ষকেরা। ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো পড়াশোনা করছে না। এ নিয়ে তাদের ভিতর অস্থিরতা কাজ করছে। পাশাপাশি আমরা যারা অভিভাবক আমাদের ভিতরও একই রকম অস্থিরতা এবং উদ্বিগ্নতা কাজ করছে। আমরা খুবই উদ্বিগ্ন আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। তা না হলে অভিভাবকদের ভিতর ক্ষোভের সৃষ্টি হবে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!