খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

নতুন মন্ত্রিসভার সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক

গেজেট ডেস্ক

আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। নতুন মন্ত্রিসভা ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কতটা সক্ষমতা দেখাতে পারবে, সে বিষয়টিই এখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।

টানা চতুর্থ দফায় আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জের মধ্যে বিশেষ করে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলানো এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলেছেন, নতুন–পুরোনো মিলিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হলেও অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকবে। এর পেছনে তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, পুরোনোদের মধ্যে ৩০ জন মন্ত্রী বাদ পড়েছেন। কিন্তু পুরোনোদের বড় অংশ মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। নতুন ১৪ জন প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছেন। এর সঙ্গে অর্থ, বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সামলে নির্বাচনী ইশতেহার বা অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দুর্বলতা ও যোগ্যতার প্রশ্ন আসতে পারে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক হারুন–অর–রশিদ মনে করেন, মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু অঙ্গীকার বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টি নির্ভর করে দলনেতা ও সরকারের কৌশলের ওপর। তিনি গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এর আগে চারবার সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বন্ধ করা, বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ চ্যালেঞ্জগুলোকে আওয়ামী লীগের নতুন সরকার মোকাবিলা করেই এগোতে পারবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে আবার মনে করেন, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে অভিজ্ঞতার ঘাটতি বা দুর্বলতা থাকলে সরকার সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আরেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ্‌ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রিসভার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, এর বড় অংশের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ও দুর্বলতা রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে বদল

মহিবুল হাসান চৌধুরী নতুন সরকারে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। যদিও তিনি আগের সরকারে এই মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এখন তাঁকে একাই পুরো মন্ত্রণালয় সামলাতে হবে।

দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী দেওয়া হয়নি। আহসানুল ইসলামকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন। যখন দ্রব্যমূল্য ও মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে একটা চাপ রয়েছে, তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো বড় একটি মন্ত্রণালয় নতুন একজন কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া কীভাবে এগিয়ে নেবেন, এ নিয়ে আলোচনা রয়েছে।

প্রথমবার মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হতে যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই ব্যবসায়ী। বাকিদের মধে৵ দুজন শিক্ষক ও একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। পুরোনো যাঁরা মন্ত্রিসভায় আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই রাজনীতিক। আর টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া একজন পেশায় চিকিৎসক।
অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে। তিনি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন; যদিও তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়েছেন। কিন্তু চাকরিজীবনে তিনি কূটনীতিক ছিলেন। ফলে নতুন সরকারের সামনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে যখন বলা হচ্ছে, এমন পটভূমিতে অর্থ খাতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই, এমন একজনকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ও আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী দেওয়া হয়নি। দ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ দলটির নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে বাণিজ্য, অর্থ, পরিকল্পনা ও কৃষিসহ যে মন্ত্রণালয়গুলো প্রধান ভূমিকা পালন করবে, সেসব মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীদের অভিজ্ঞতার বিষয় আলোচনায় রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ একটা অবস্থান নেয়। ফলে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। এমন পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে। তিনি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন; যদিও তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়েছেন।

পুরোনো ১৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিজ মন্ত্রণালয়ে বহাল

ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক। এক যুগের বেশি সময় ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন তিনি। এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেলসহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব প্রকল্পকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করেছে। ফলে এই মন্ত্রণালয়ে ধারবাহিকতা চেয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।

বাংলাদেশে যেকোনো সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অল্প দিনেই বিতর্কিত হওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। সে তুলনায় আসাদুজ্জামান খান কিছুটা ব্যতিক্রম। ১০ বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলেছেন। এ ছাড়া স্বল্পভাষী হওয়ায় তাঁকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়নি।

গত দুই মেয়াদে আইন মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন আনিসুল হক। এবারও তাঁকে এই পদের জন্য বিবেচনা করেছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা। আইন অঙ্গনে তাঁর বাবা প্রয়াত সিরাজুল হকের পরিচিতি ব্যাপক।

তাজুল ইসলামকে মন্ত্রিসভায় রেখে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সব সময় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে রাখা হয়। ফলে এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়। এক দশক ধরে নসরুল হামিদ এই দায়িত্ব পালন করছেন। এবারও তাঁকে একই পদে রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে শুধু বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্ব পেলেন তিনি।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও জাহিদ ফারুক এক মেয়াদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী দেওয়ার পরিকল্পনা নেই শীর্ষ নেতৃত্বের। আবার তাঁদের পূর্ণমন্ত্রী করাও হবে না। তাই একই মন্ত্রণালয়ে রাখা হয়েছে। জুনাইদ আহ্‌মেদও এবার মন্ত্রী হওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে প্রতিমন্ত্রীর পদেই রাখা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক। এক যুগের বেশি সময় ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন তিনি। এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেলসহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব প্রকল্পকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করেছে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রধান্য

বিদায়ী মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মাত্র পাঁচজন নেতা ছিলেন। কিন্তু নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেন নয়জন। তাঁরা হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, মুহাম্মদ ফারুক খান, দীপু মনি, হাছান মাহমুদ, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সিমিন হোসেন রিমি ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, সরকার ও দলকে আলাদা করার একটা আলোচনা ছিল আওয়ামী লীগে। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় এর প্রভাব ছিল। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে সামনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে। এ জন্য দলের সক্রিয় রাজনীতিকদের এবার কিছুটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকা কিছু কিছু নেতাকেও পুরস্কার হিসেবে এবার সরকারে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে যেকোনো সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অল্প দিনেই বিতর্কিত হওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। সে তুলনায় আসাদুজ্জামান খান কিছুটা ব্যতিক্রম। ১০ বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলেছেন।

পরিবর্তন ও নতুন সংযোজন যে কারণে

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, তথ্যমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলীয় কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় রয়েছেন হাছান মাহমুদ। এবার তাঁকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সরকারে হাছান মাহমুদ কিছুদিনের জন্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি নতুন মন্ত্রিসভাতেও জায়গা ধরে রেখেছেন। তবে এবার তাঁকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে।

আবদুর রহমান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক সাম্প্রতিক সময়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ ছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে দলের কর্মকাণ্ডে তাঁরা সক্রিয় ছিলেন। এ জন্য তাঁদের দুজনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়েছে বলে দলে আলোচনা আছে। আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় চালানোর অভিজ্ঞতার কারণে ফারুক খানকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!