নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া এবং যুক্তরাজ্যে করোনার একটি নতুন ধরন ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যাওয়ার কথা শুনে দেশটির সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ১০টি দেশ। আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক বিভিন্ন মেয়াদে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এমনটি জানানো হয়েছে। সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভা রয়েছে। এতে এ বিষয়ে সম্মিলিত পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
লন্ডন ও দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে নতুন ধরনের করোনার দাপট লক্ষ্য করা গেছে। এসব অঞ্চলে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণই বেশি হচ্ছে। লন্ডনের ৬২ শতাংশ সংক্রমণই নতুন ধরনের। এজন্য গত শনিবার লন্ডন ও দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে টিয়ার-ফোর বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এসব এলাকায় নিতান্তই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকতে হবে।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই নেদারল্যান্ডস জানায় ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্য থেকে দেশটিতে যাত্রীবাহী ফ্লাইট ঢুকতে দেবে না তারা। পরে তারা নদীপথের যাত্রীদেরও ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানায়। তবে পণ্যবাহী পরিবহণ বা বিমান চলাচল করতে পারবে। ফ্রান্স অবশ্য ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থল ও আকাশ পথের সব ধরনের পরিবহণ বন্ধ ঘোষণা করেছে। আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে ইতালি। দেশটিতে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, নতুন ধরনের করোনা ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। এখন তা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে।’ তবে তিনি বছরের শেষ সময়টাকে ‘মারাত্মকভাবে কঠিন’ আখ্যা দিয়েছেন। সচরাচর করোনার চেয়ে নতুন ধরনের করোনা বেশি প্রাণঘাতী এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে এটির সংক্রমণ ক্ষমতা ৭০ শতাংশ বেশি। শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে একথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ২০ লাখ ৪০ হাজার ১৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৭ হাজার ৪০১ জনের। বিশ্বখ্যাত পরিসংখ্যান সাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার এসব তথ্য জানিয়েছে।
নতুন ধরনের এই করোভাইরাস সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে?
ব্রিটিশ গবেষকরা লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলে যে ভাইরাসের বিস্তার দেখছেন, সেটিকে তারা নিউ ভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাস বলে বর্ণনা করছেন। এটি যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, সেরকম প্রমাণ তারা এখনো পাননি। আর এটিকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের নতুন টিকা যে ভিন্ন ফল দিচ্ছে, সেটাও তারা বলছেন না।
করোনাভাইরাসের মহামারি শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অন্য যে কোন ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসের এই নতুন ভাইরাসটিও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে। লন্ডন এবং আশে-পাশের অঞ্চলের ভাইরাসটি নতুন করোনাভাইরাসের এরকম এক পরিবর্তিত রূপ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
যেটি গবেষকদের অবাক করেছে, তা হলো, এই ভাইরাসটি অনেক বেশি সহজে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগেরটির তুলনায় এই নতুন করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারকে যে শুক্রবার আচমকা আবারও কঠোর লকডাউন জারি করতে হলো, তার পেছনে এটাই কারণ। এটি সরকারের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছে, এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি পাওয়া গেছে। এটা নিযে তারা তাই ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
খুলনা গেজেট/কেএম