খুলনায় ১০৫ কেজি ভেজাল মধুসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে খুলনা মহানগরের আড়ংঘাটা থানা এলাকার সিটি বাইপাস সড়কের ভেজাল মধু তৈরীর কারখানা থেকে তাদেরকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভেজাল মধু তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
আটকৃতরা হলেন, সাতক্ষীরা শ্যামনগরের মাথুরাপুর এলাকার মোঃ আশরাফুল ইসলাম রিপন (৩৪) ও শ্যামনগরের বাদঘাটা এলাকার শেখ শাহরিয়ার মাসুদ (৩৮)।
খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ- কমিশনার মো. নুরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনা মহানগর ডিবি পুলিশের একটি টিম আড়ংঘাটা থানাধীন সিটি বাইপাস সড়কের আকমানের মোড়স্থ এলাকায় একটি কারখানায় নকল ও কথিত মধু (ভেজাল মধু) উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানতে পারে। আজ দুপুর পৌনে ৩ টার দিকে ওই এলাকাট বাইতুস শরিফ জামে মসজিদের পূর্ব পাশে জনৈক অপু সাহেবের টিনসেড বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ১০৫ কেজি ভেজাল মধু এবং ভেজাল মধু তৈরীর সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। ভেজাল মধু তৈরির সরঞ্জামের মধ্যে ছিল- একটি হলুদ রংয়ের প্লাস্টিকের তৈরি ড্রামে রক্ষিত ১০ কেজি চিনি সিরা, ফ্রেস ২ লিটারের পানির বোতলে রক্ষিত জালানো মধু, যাহা রং হিসেবে মধু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সাদা প্লাস্টিকের কৌটায় রক্ষিত ফিটকিরি চূর্ণ, একটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তায় রক্ষিত ১২ কেজি চিনি, একটি প্লাস্টিকের পানির জার, একটি নীল রংয়ের প্লাস্টিকের অর্ধেক ড্রাম, যা মধু রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া একটি এক বার্নার বিশিষ্ট গ্যাসের চুলা, একটি গ্যাস সিলিন্ডার, একটি ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্র, ১৪টি প্লাস্টিকের তৈরি নীল কর্কযুক্ত সাদা রংয়ের বোতল, কাঁচের তৈরি বোয়েম ১২ টি, সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের তৈরি ছোট কৌটা ২৪টি, সাদা কর্কযুক্ত প্লাস্টিকের ছোট বোতল ৩৬টি, একটি সবুজ রংয়ের প্লাস্টিকের তৈরি কর্ক (মধু ঢালার পাত্র) এবং কালো জিরা ফুলের মধু লেখা স্টিকার ৫টি।
কিভাবে ভেজাল মধু তৈরি করা হয়, যা জানালেন ডিসি ডিবি
খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ- কমিশনার মো. নুরুজ্জামান বলেন, অভিযানকালে জানা যায় মোঃ আশরাফুল ইসলাম রিপন ও শেখ শাহরিয়ার মাসুদ দীর্ঘদিন যাবৎ ভেজাল মধু উৎপাদন করে আসছিলেন। এই ভেজাল মধু তৈরির জন্য তারা প্রথমে চিনি, ফিটকিরি, কেমিক্যাল গ্লুকোজ ও অন্যান্য সরঞ্জাম চুলায় ফুটিয়ে নেয়। তারপর ওই মিশ্রণ ঠান্ডা হলে তাতে মধুর ফ্লেভার আনার জন্য সামান্য পরিমাণ মধু মেশানো হয়। এরপর ওই
মিশ্রণ বোতলজাত করে তার গায়ে ‘অর্গানিক বিডি’র লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় সুন্দরবনের খাঁটি মধু। এই মধু তারা অনলাইন এবং অফলাইনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। যা পরবর্তীতে খাঁটি মধু হিসেবে ভোক্তার কাছে যায়। এই মধু জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এতে কিডনী নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
খুলনা মহানগর ডিবি প্রধান আরও জানান, আসামী মোঃ আশরাফুল ইসলাম রিপনের বিরুদ্ধে একটি মারামারি মামলা এবং একটি মাদকের মামলা (৭ বছররে সাজাপ্রাপ্ত) রয়েছে এবং অপর আসামী শেখ শাহরিয়ার মাসুদের বিরুদ্ধে একটি মাদকের মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আড়ংঘাটা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।