ভারতের কলকাতা মহানগরীর পার্কসার্কাস এলাকার এক বিখ্যাত রাস্তার নাম সৈয়দ শামসুল হুদা রোড। পার্কসার্কাস এলাকার মিঠাই বেকবাগান বাস স্টপেজ থেকে রাস্তার শুরু। রাস্তাটি শেষ হয়েছে পশ্চিম দিকে রাইফেল রেঞ্জ রোডে মিশে। বিশেষ ট্রেড মার্ক হল আদি বালিগঞ্জ বিদ্যালয়। আমরা ক’জন এই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নওয়াব সৈয়দ শামসুল হুদাকে জানি?
অধুনা বাংলাদেশের ব্রাহ্মনবাড়িয়ার গোকর্ণ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬২ সালে বিখ্যাত সৈয়দ পরিবারে। একসময়য় এটি কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত ছিল। পিতার নাম সৈয়দ রিয়াজতুল্লাহ্। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ফারসি ‘দূরবীণ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রিয়াজ সাহেব। শামসুল হুদা খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। হুগলি কলেজ (বর্তমানে হুগলি মহসীন কলেজ) থেকেএন্ট্রাস পাশ করেন। ১৮৮৬ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বি এল পাশ করেন। ১৮৮৯ সালে ঐ কলেজ থেকে প্রাইভেটে এম এ পাশ করেন। তারপর কলকাতা মাদ্রাসা কলেজে (এখন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়) আরবি ও ফার্সীর সহযোগী শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯০৯ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম আইনপরিষদের সদস্য হন। ১৯০৯ সালে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য হন। ১৯১২ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সভাপতি হন। তার আগে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্পাদক ছিলেন। ১৯১২-১৭ সাল পর্যন্ত বাংলার গভর্ণর পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯১৭ সালে আইনজীবী হিসাবে সুনাম অর্জন করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হন। ১৯২১ সাল পর্যন্ত তিনি বিচারপতি ছিলেন। ১৯২১ সালে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। তার আগে তার কর্মদক্ষতার জন্য ১৯১৩ সালে ‘নবাব’ ও ১৯১৬ সালে সি আই আই উপাধি পান। শামসুল হুদার জীবনে উল্লেখযোগ্য ঘটনা কলকাতার শ্যামবাজারের কাছে টালা পার্কের দাঙ্গা থামানো।
তার আগে তিনি ১৮৯৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর হন। ১৯০২ সালে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টৈগোর’ আইনের অধ্যাপক হন। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ, যা আজ মৌলানা আজাদ কলেজ নামে পরিচিত তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শামসুল হুদার বড় ভূমিকা ছিল। সে আমলেই তিনি তিন লাখ টাকা অর্থ সংগ্রহ করেন। কলকাতার পার্কসার্কাস কড়েয়া বয়েজ হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা তাঁর উদ্যোগের ফসল।
সর্বোপরি ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নবাব সলিমুল্লাহর পাশাপাশি হুদা সাহেবের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। কলকাতা থেকে ‘সুধাকর’ ও ‘দি মহামেডান অবজারভার’ প্রকাশের ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। ১৯১২ সালে ব্রিটিশ ভারতের আইনসভার সদস্য হন। নিজ গ্রাম গোকর্ণে স্থাপন করেন ওয়ারি উচ্চ বিদ্যালয়। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আসমাতুন্নেসা ছাত্রাবাস’। ১৯২২ সালে এই ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান হয়। তাঁর ইতিহাসেরও কি অপমৃত্যু হবে?