লকডাউন উপেক্ষা করে নওয়াপাড়ায় রেললাইনের ওপর দীন মজুর কেনা-বেচার হাট বসে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার। রেল লাইনের ওপর এ হাট বসার কারণে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শ্রমিক বেচা-কেনার এ হাটে মানা হচ্ছেনা কোন স্বাস্থ্যবিধি। জীবিকার তাগিদে করোনা কে ভয় পায়না ওরা। এবছর আম্ফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার শ্রমিক ও মঙ্গা অঞ্চলের শ্রমিকরা শ্রম দেয়ার আশায় অভয়নগর, নড়াইল, মণিরামপুর, ফুলতলা, ডুমুরিয়া এলাকায় ধান কাটা ও ধান রোপন সহ বিভিন্ন কাজে আসে।
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা থেকে আসা দীন মজুর কেরামত আলী জানায়, এ বছর আম্ফান ঝড়ে আমাদের অঞ্চলে অনেক ক্ষতি হয়েছে, ধান হয়নি। আমাদের অঞ্চলে এখন অনেক অভাব যে কারনে লকডাউন উপেক্ষা করে বাস বন্ধ থাকায় আমারা ট্রাকে করে এখানে শ্রম বিক্রি করতে এসেছি। অনেকে আবার থ্রি হুইলার ও ইজিবাইকে করে অনেক সময় ব্যয় করে এখানে এসেছে। আসতে দ্বিগুন খচর হয়েছে, সে-তুলনায় এখানে শ্রমিকের দাম অনেক কম। আজকে শ্রমিক বিক্রি হচ্ছে ৭শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা।
সরেজমিনে, নওয়াপাড়া রেল স্টেশনের পাশে শ্রমজীবি মানুষের কেনা-বেচার হাটে গিয়ে দেখা যায়, এ হাটে সাতক্ষীরা অঞ্চলের শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি এসেছে। এছাড়াও রাজশাহী, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া থেকেও শ্রমিক এসেছে। শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের উপর বসে আসে। আবার অনেক শ্রমিক একটু বিশ্রাম নিতে রেল বগির নিচে শুয়ে-বসে আছে। যে কোন মুহুর্তে রেলের ইঞ্জিন চালু হলে এসব শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে, এটা তারা জানেনা।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, এ রেললাইনের উপর প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। কয়েক বছর আগে কিছু শ্রমিক রেল বগির নিচে শুয়েছিল, এসময় ট্রেনের ইঞ্জিন চালু হওয়ার কারণে ৪/৫জন শ্রমিক মারা যায়।
দিনাজপুর থেকে আসালাম, মামুনসহ অনেক শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে তারা জীনের ঝুঁকি নিয়ে মালবাহি ট্রেনে করে এখানে এসেছে।
শ্রমিক ও মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ হাটে দুই ধরণের শ্রমিক বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমির ধান কেটে বেঁধে দিলে ৩ হাজার ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা দিতে হবে। আবার সারা দিন শ্রম দিলে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দেয়া হবে শ্রমিকদের। খাওয়া-দাওয়াও তাদের দিতে হবে।
অভয়নগর উপজেলার বাগদা গ্রামের মাসুম বিশ্বাস জানায়, লকডাউনের কারণে বাইরে থেকে শ্রমিক আসতে পারছেনা। তাই দিন মজুর শ্রমিকের দাম অনেক বেশি। এক মণ হিরা ধানের দাম ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। আবার একজন শ্রমিকের মজুরও ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। যেকারণে আমাদের অঞ্চলে অনেকে এখনও ধান কেটে বাড়ি তুলতে পারেনি। যে কোন সময়কাল বৈশাখী ঝড় হলে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আগামী ২৮ এপ্রিলের পরে লকডাইন শেষ হলে দীনমজুরের দাম কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। এদিকে নওয়াপাড়া বাজারে পুলিশের ধড়পাকড় লক্ষ্য করা গেলেও রেললাইনের উপর দীনমজুর বেচা-কেনারহাটে পুলিশের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
খুলনা গেজেট/কেএম