এডিবি’র অর্থায়নে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া-মশিয়াহাটী ও শংকরপাশা-ভাটপাড়া সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ। জনভোগান্তি চরমে, দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে একইসাথে।
যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, নড়াইলের কালিয়া, নড়াইল সদর উপজেলার সাথে এ দু’টি সড়কের যোগসূত্র রয়েছে। দশ লক্ষাধিক লোক চলাচল করে এ ২ টি সড়ক দিয়ে। চলাচল বিপজ্জনক হলেও কর্তৃপক্ষ নীরবতা পালন করছে।
এডিবি’র অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্ধে অভয়নগরের প্রায় ১২ কি.মি.দীর্ঘ এ ২ টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয় দু’বছর আগে। কিন্তু নির্মাণ কাজ অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে চলে। নওয়াপাড়া-মশিয়াহাটী সড়কে ৪০% এবং শংকরপাশা-ভাটপাড়া সড়কে ২০% কাজ সম্পন্ন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ মে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার মধ্যে এলোমেলোভাবে পড়ে রয়েছে। আর এ কারণেই ভোগান্তি আর দুর্ঘটনার সূত্রপাত। সংগত কারণে জনরোষ বাড়ছেই।
রুরাল কানেটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আর সি আই পি) এর মাধ্যমে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সড়ক দু’টি নির্মাণ করার জন্য অর্থ বরাদ্ধ দেয়। এতে মোট ব্যয় বরাদ্ধ রাখা হয় ২৩ কোটি, ৩৪ লাখ, ২১ হাজার ৫ শ’২৯ টাকা। এর মধ্যে অভয়নগরের নওয়াপাড়া টু মণিরামপুরের মশিয়াহাটী সড়কের ৭ দশমিক ৩০০ কি.মি সড়ক নির্মাণে বরাদ্ধ হয় ১৪ কোটি ৩৭ লাখ ২১ হাজার ৮ শ’৫০ টাকা এবং বাঘুটিয়া ইউনিয়নের শংকরপাশা টু ভাটপাড়া(ভৈরব নদের তীর এলাকা) দীর্ঘ ৪ দশমিক ৮১০ কি.মি. সড়ক নির্মাণে বরাদ্ধ হয় ৮ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬ শ’৭৯ টাকা। মেসার্স মৈত্রী বিলডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়ে ৭/১২/২২ খ্রি: তারিখে কাজ শুরু করে। কাজ শেষ করার কথা ৩১ মে’২০২৪। প্রায় দেড় বছর কাল ঢিলেঢালাভাবে কাজ চলতে থাকে।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মেয়াদ বৃদ্ধিসহ ওয়ার্কপ্লান জমা দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া স্থানীয়দের দাবি, মশিয়াহাটী-নওয়াপাড়া সড়কের ২৪২০ মিটার দীর্ঘ অংশে কোন কাজই করেনি ঠিকাদার। অধিকাংশ স্থানে পুরাতন রাস্তার খোয়া ভেঙ্গে নতুনের সাথে মিকচার করে দেওয়া হয়েছে। প্লাসাইডিংসহ মাটি ভরাট, আড়াই কি.মি. ইটের খোয়া দেওয়া, মাটি ফেলা ও কার্পেটিং কাজ বাকি রয়েছে। অপরদিকে শংকরপাশা-ভাটপাড়া সড়কের অধিকাংশ জায়গায় পুরানো ইট উঠিয়ে জড় করা রাখা হয়েছে । ২/২ কালভার্ট ২ টির নির্মাণ কাজ এখনো শুরুই হয়নি। এর কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে নির্মাণ কাজ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের মেয়াদ না বাড়ানোর কারণে তারও এলাকায় আসছেন না। রাস্তার অবস্থা নাজুক। ইতোমধ্যে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার ১ শ’ ১৭ টাকার পেমেন্ট পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। ২য় চালানের ১ কোটি ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬ শ’ ৫৯ টাকার চেক পাস হয়ে রয়েছে।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হুদা জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও আমলে নিচ্ছে না। কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। পেমেন্ট সেটেলমেন্ট সম্পন্ন হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে কার্যাদেশ বাতিল করা ছাড়া আর কোন উপায় খোলা নেই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মেদ মাহবুবুর রহমানের সংঙ্গে ০১৭০৮১২৩২০১ নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঠিকাদার আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হয়। তিনিও ফোন রিসিভ করছেন না। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরও বারবার ফোনে যোগাযোগ করেছে, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা সাড়া দিচ্ছেনা।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর দাবি, মেয়াদোত্তীর্ণ কাজের ওয়ার্কঅর্ডার বাতিল করে সড়ক দু’টির অসমাপ্ত কাজ শেষ করা হোক।
খুলনা গেজেট/এএজে