খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৩০ জুন, ২০২৪

Breaking News

  জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস
  আগামি বছর এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলে : বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি
এমপি আনার হত্যা

ধামাচাপা স্বর্ণ চোরাচালান ইস্যু, লাশ শনাক্তের উদ্যোগও বন্ধ

গেজেট ডেস্ক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে নিতে শুরু হয়েছে নানা খেলা। বিচার নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়! এখনো ডিএনএ টেস্টের আবেদনই করেনি কলকাতা সিআইডি। এমপি আনার হত্যার মূল মামলা কলকাতায়। বাংলাদেশে হলো অপহরণ মামলা। হত্যা মামলা সম্পর্কে বাংলাদেশের ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই বলে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান। তবে দুই দেশের সরকার চাইলে বাংলাদেশে বিচার করা সম্ভব। নিহত ব্যক্তি এবং খুনিরা সবাই যদি বাংলাদেশী নাগরিক হয় তাহলে সম্ভব হবে।

এদিকে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ শুরুতে বলেছেন, স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটতে পারে। আবার এখন বলছেন, রাজনৈতিক বিরোধে এই হত্যাকান্ড হতে পারে। অর্থাৎ দুই ধরনের বক্তব্য। একেক সময় একেক কারণ বের হচ্ছে। এ নিয়ে এমপি আনারের নির্বাচনী এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলেন, এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত এমপি আনার হত্যাকাণ্ড হয়েছে স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। এই ধরনের তথ্য তারা পাচ্ছেন। কারো কারো রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে। তবে স্বর্ণ চোরাচালানকে তারা হত্যার মূল কারণ হিসেবে দেখছেন এখনো।

ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এক সময় চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের অভয়রণ্য ছিল। ওই সময়ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পথ দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান হতো। প্রায় চরমপন্থী গ্রুপদের মধ্যে রক্তপাত হলেও স্বর্ণ চোরাচালানে ছিল সবাই ঐক্যবদ্ধ। কারো কারো রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু স্বর্ণ চোরাচালানের রুট বন্ধ হয়নি। একই সঙ্গে হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে আসছে। সোনা চোরাচালানের রুটগুলোতে সবার দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া ছিল। ওপার থেকে বাংলাদেশে আসতো মাদক ও অস্ত্র। আর বাংলাদেশ থেকে যায় সোনা। ওই এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেসব সদস্য দীর্ঘদিন ধরে যারা কাজ করেছেন এবং এখনো যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের অনেকেরই বিষয়টি জানা।

একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ হলো স্বর্ণ চোরাচালান। আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত তত্পরতা তেমন চোখে পড়ার মতো না। সিআইডি এখনো পর্যন্ত ডিএনএ টেস্ট করার আবেদন আদালতে করেনি।

এদিকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের কিলিং মিশনে জড়িত সাত জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা মধ্যে পাঁচ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আর দুই জনকে গত বুধবার পার্বত্যাঞ্চল থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে এসেছে। তাদের ছয় দিন করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবির প্রধান হারুন-উর রশীদ জানান, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শহীনকে গ্রেফতার করা গেলে হত্যার কারণ এবং এর পেছনে আরও অন্য কেউ জড়িত কিনা তা জানা যাবে।

এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের পেছনে স্বর্ণ চোরাচালানের বড় বড় মাফিয়ারা আছেন, তারা বহু বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। এপার-ওপার দুই পার লাভবান হচ্ছে। হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। যারা জড়িত তারা খুবই শক্তিশালী। একাধিক প্রভাবশালী সংসদ সদস্য এর সাথে জড়িত। আনার হত্যার মামলা যেন আলোর মুখ না দেখে কিংবা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয় সেজন্য মাফিয়া গ্রুপটি প্রভাব খাটাচ্ছে। একাধিক এমপিও স্বর্ণ চোরাচালানির ব্যবসায় জড়িত।

একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কয়েক জন এমপির বাবারা ছিলেন সাধারণ কর্মচারী ও দিনমজুর। সেই দিনমজুরের পুত্ররা এমপি হয়ে এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ কেউ এখন এমপি হয়েছেন। তাদের রক্ষায় একাধিক প্রভাবশালী এমপিও সহায়তা করে আসছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার মোটা অঙ্কের টাকার ভাগ পেতেন, এখনো পাচ্ছেন। সুবিধাভোগীরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য আনার হত্যাকাণ্ড মামলাটি ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দেখাচ্ছে যে সব কিছু করছে। আদৌ এটা আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

এখনো পর্যন্ত যে ভবনে এমপি আনার খুন হয়েছেন, সেই লাশটা আনারের কিনা তা এখনো শনাক্ত হয়নি। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারপরও ডিএনএ টেস্ট হয়নি।

আইনজ্ঞদের মতে, লাশ শনাক্ত করা ছিল প্রথম কাজ। তাত্ক্ষণিক ওই ঘরে পরীক্ষা করলে সেটি আনারের ডেডবডি কিনা জানা যেত। ইতিমধ্যে তার হাড় ও মাংস উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে মাংস থেকে ডিএনএ টেস্ট করে ফলাফল পাওয়া যায় না। তবে হাড়ের হাড় ও চুল থেকে পরীক্ষা করলে একশ’ বছর পরেও পাওয়া যাবে। এরপরও ডিএনএ টেস্ট নিয়ে যে লুকাচুরি হচ্ছে। তার নির্বাচনী এলাকার একাধিক নেতা বলেছেন, এমপি আনার হত্যাকাণ্ড মামলাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার একটা সূক্ষ্ম পরিকল্পনা বলে তাদের ধারনা।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী আনার হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলাদেশে করা সম্ভব। যে ব্যক্তি খুন হয়েছেন ও খুনের সঙ্গে জড়িতরা বাংলাদেশের নাগরিক থাকেন। তবে এক্ষেত্রে দুই দেশের সরকারের সম্মতিতে বাংলাদেশে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা সম্ভব। তিনি বলেন, যদি এই হত্যাকাণ্ডে ভারতের কোন নাগরিক জড়িত থাকে তাহলে এদেশে এনে বিচার করা সম্ভব নয়। তখন ভারতেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে।

বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুনে ফয়সাল ও মোস্তাফিজ সরাসরি অংশ নেন। হত্যার জন্য আনারকে অচেতন করতে চেতনানাশক দিয়েছিলেন ফয়সাল। আর চেয়ারে বেঁধে রাখার কাজ করেছিলেন মোস্তাফিজসহ কয়েকজন। আনার খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। তারা খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। শিমুল ধরা পড়লেও এতদিন পলাতক ছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত দুজনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ছয় দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেছেন আদালত।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!