দ্রুত ও ভোগান্তিমুক্ত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারক ও আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (৪ নভেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
ন্যায়বিচার জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে, (আমরা অনুরোধ করব) এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিন। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত আদালতে প্রায় ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বিচারক এবং আইনজীবীদের এসব মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় দেওয়ার উপায় খুঁজতে অনুরোধ করেন।
‘এত বেশি মামলা যেন না পড়ে থাকে। একটু আন্তরিক হোন এবং এই বিচারগুলো সম্পন্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু করার প্রয়োজন হলে তা করা হবে, কিন্তু এতগুলো মামলা এভাবে পড়ে থাকুক তা আমরা চাই না,’ বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সর্বদা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যখনই আমরা ক্ষমতায় এসেছি, আমরা প্রথমে এটি নিশ্চিত করেছি, সবার জন্য ন্যায়বিচারের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা বিশেষ মনোযোগ দিয়েছি। আমরা সেভাবেই কাজ করি।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যার পর তিনি এবং তার ছোট বোনের বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতিতে’ তাদের মতো কেউ যেন ভোগান্তিতে না পড়েন। নারী ও শিশু ধর্ষণ একটি জঘন্য কাজ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রদান এবং এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ইতোমধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০২০ (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি করেছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় এটি পাস হয়েছে এবং সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে এটি তোলা হবে এবং আইন হিসেবে পাস করা হবে। তিনি ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক একটা বড় সমস্যা। এক একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। একটা মানুষকে তো ধ্বংস করেই, একটা পরিবারকেও ধ্বংস করে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। কাজেই এই মাদকের ব্যাপারেও আমাদের যে আইন রয়েছে, সেটাও আমরা প্রণয়ন করেছি।
‘আমরা এটাই চাই মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যেন শাস্তি পায় এবং মাদকের হাত আমাদের সমাজটা যেন রক্ষা পায়। পরিবারগুলো রক্ষা পায়। মেধাবী ভাল ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা যেন রক্ষা পায় তাদের মেধাটা যেন আমাদের সমাজের কাজে লাগাতে পারি, সেটাই আমরা চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন দেশের প্রধান তিনটি অঙ্গ-আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী- একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করেন তখন দেশ সঠিকভাবে চলতে পারে। তিনি কেরানীগঞ্জের কারাগারের মতো সব কারাগারে ভার্চুয়াল আদালত চালুর জন্য বিচার বিভাগকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম তুলে ধরেন।
ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় রায় লেখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মামলার রায় ইংরেজিতে দেওয়া হয়। ফলে অনেক সময় আমাদের দেশে এখন হয়তো একটু লেখাপড়ার সংখ্যা বাড়ছে, তারপরও অনেকে সেই রায়টা বুঝতে পারে না। তিনি তার সহায়ক যে থাকেন তিনি যা বুঝান তাই বুঝতে বাধ্য হয়। রায় যদি কেউ বাংলায় না লিখতে পারেন, তাতে আপত্তি নাই কিন্তু সাথে সাথে সেটা বাংলায় ট্রান্সলেশন করে এটা যেন প্রচার হয় সে ব্যবস্থাটা করে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতিকে আমি অনুরোধ করবো, আপনারা একটু ব্যবস্থা নেন। কারণ এটা জুডিশিয়াল ব্যাপার। কারণ এর অনেক কথা, অনেক শব্দ, অনেক টার্ম, যেগুলো আমাদের সাধারণভাবে ব্যবহার হয় না। কিন্তু সেটা সহজভাবে যেন পারা যায়, কাজেই এই ট্রান্সলেশন করার জন্য কিছু লোককে যদি আপনারা ট্রেনিং দিয়ে দেন এবং তাদের কাজেই থাকবে যেটাই লেখা হোক, সাথে সাথে ট্রান্সলেশন হয়ে যাবে এবং সেটাই প্রচার হবে, সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ জানতে পারবে। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সরোয়ার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
খুলনা গেজেট/কেএম