তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সামাজিকভাবে বৈষম্যের শিকার। বেঁচে থাকার তাগিদে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের অবহেলা আর কটুবাক্যের ধকল সামলাতে হয় তাদের। কিন্তু দিন বদলেছে। সেসব গ্লানিকে পেছনে ফেলে আগের তুলনায় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে তাদের। বেড়েছে প্রতিনিধিত্ব আর গ্রহণযোগ্যতা। বৈশ্বিক বিনোদন শিল্প থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক অঙ্গন পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেই তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সাফল্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা ক’দিন আগেও ছিল অকল্পনীয়। পুরনো সামাজিক কলঙ্ককে টেক্কা দিয়ে তাদের অনেকেই মিলিয়নেয়ার, কেউ আবার বিলিয়নেয়ারও। ফোর্বস ম্যাগাজিন এবং সেলেব্রিটিদের সম্পদ অনুমানকারী মার্কিন ওয়েবসাইট সেলেব্রিটি নেটওয়ার্থ থেকে তথ্য নিয়ে তুলে আনা হয়েছে ধনী সাত তৃতীয়লিঙ্গের তালিকা।
১. জেনিফার প্রিট্জকার
তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে ধনী জেনিফার প্রিট্জকার। বয়স ৭১ বছর। বর্তমানে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। তার বাবা রবার্ট এবং দুই চাচা জে এবং ডোনাল্ড তার মারমন গ্রুপের ব্যবসায় উৎসাহ যুগিয়েছেন। হায়াত হোটেলের চেইন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ওই প্রতিষ্ঠান। জনহিতকর কার্যকলাপ এবং বিনিয়োগের জন্য পরিচিত জেনিফার শিকাগোতে অলাভজনক প্রিট্জকার মিলিটারি মিউজিয়াম ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন।
২. মার্টিন রথব্লাট
সাতষট্টি বছর বয়সী এ তৃতীয়লিঙ্গ ৫৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। একজন সফল উদ্যোক্তা। আশির দশকের শুরুতে এমবিএ ডিগ্রি শেষ করে স্যাটেলাইট যোগাযোগ, বিশেষ করে বৈশ্বিক স্যাটেলাইট রেডিও নেটওয়ার্ক খাতে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন। চালু করেন কয়েকটি যোগাযোগ সংস্থাও। পরে প্রতিষ্ঠা করেন বায়োটেক কোম্পানি ইউনাইটেড থেরাপিউটিকস। জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা প্রযুক্তি তৈরির মাধ্যমে ছড়ান ব্যবসার ডালপালা।
৩ ও ৪. লানা ওয়াচৌস্কি ও লিলি ওয়াচৌস্কির
দুই সহোদর লানা ওয়াচৌস্কি (৫৬) এবং লিলি (৫৩) ওয়াচৌস্কির কাজের বিস্তৃতি হলিউডের চলচ্চিত্রাঙ্গনে। যৌথভাবে ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ পরিচালনা করে বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগিয়েছিলেন। দু’জনই যৌথভাবে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। বিজ্ঞানের কল্পকথায় সমৃদ্ধ ১৯৯৯ সালে নির্মিত দ্য ম্যাট্রিক্স ছবিটির লেখকও তারাই। এর তিনটি সিরিজই বিশ্বব্যাপী দারুণ ব্যবসা করেছে। পরে ছবিটির বই, ভিডিও গেম এবং এনিমেশন ছবি দিয়েও তারা আয় করেন লাখ লাখ ডলার।
৫. কেইটলিন জেনার
তর্ক থাকলেও, বলা হয়ে থাকে তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেন ৭২ বছর বয়সী কেইটলিন। মার্কিন রিয়েলিটি শো কিপিং আপ উইথ দ্য কারদাশিয়ান্স খ্যাত এই তারকা এরই মধ্যে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। সাবেক অলিম্পিক গোল্ড মেডেলিস্ট হিসেবে নিজেকে বিশ্বে পরিচিত করেছিলেন আগেই। ২০টি সিজন চলেছিল তার ওই রিয়েলিটি শো। তার সম্পদের উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে অলিম্পিকের সোনাজয়ী হিসেবে স্পন্সরশিপ থেকে।
৬. লেভার্ন কক্স
টিভি শো অরেঞ্জ ইজ দ্য নিউ ব্ল্যাক-এ সমালোচকদের প্রশংসা অর্জনের জন্য সুপরিচিত ৪৯ বছর বয়সী এই তারকা। তিনি এমন একজন অগ্রণী ট্রান্স অভিনেত্রী যিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র এবং টিভি প্রকল্পে সম্পৃক্ত ছিলেন। ডেটাইম এমি অ্যাওয়ার্ড, সম্মানসূচক ডক্টরেট এবং ২০১৫ সালে পিপলস ম্যাগাজিনে ‘সবচেয়ে সুন্দর নারী’র খেতাব পাওয়া কক্স ৪ মিলিয়ন ডলারের মালিক।
৭. লরা জেন গ্রেস
এগেইন্সট মি মিউজিক্যাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ট্রান্স পাঙ্ক রকার লরা জেন গ্রেস একজন গিটারিস্ট এবং প্রধান ভোকালিস্ট হিসেবে জনপ্রিয়। ৪০ বছর বয়সী এ সঙ্গীতশিল্পী দু’হাতে কামিয়ে নিচ্ছেন অর্থ আর সাফল্য। এ পর্যন্ত তার সাতটি স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠার সঙ্গে পেয়েছেন প্রতিপত্তিও। বর্তমানে তার মোট সম্পত্তির মূল্য ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।