খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

দ্বীনদার লোকদের সাথে আদব এবং আল্লাহর জন্য তাদেরকে ভালোবাসা ও বিদ্বেষ রাখা (পর্ব : ১৮)

মুফতি জুবায়ের হাসান

আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমানের দাবি অনুযায়ী মুসলিম ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসবে শুধু আল্লাহর জন্য এবং কাউকে ঘৃণা করবে— তাও শুধু আল্লার জন্য; কারণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পছন্দই তার পছন্দ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অপছন্দই তার অপছন্দ; সুতরাং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসার কারণেই সে তাকে ভালোবাসবে এবং তার প্রতি তাঁদের ঘৃণার কারণেই সে তাকে ঘৃণা করবে।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
مَنْ أَحَبَّ لِلَّهِ وَأَبْغَضَ لِلَّهِ وَأَعْطَى لِلَّهِ وَمَنَعَ لِلَّهِ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ الإِيمَانَ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসল, আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করল, আল্লাহর জন্য কাউকে দান করল এবং আল্লাহর জন্য কাউকে দান করা থেকে বিরত থাকল, সে ব্যক্তি নিজ ঈমানকে পূর্ণতা দান করল।” –সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৪৬৮১
আলোচ্য হাদীসের ওপর ভিত্তি করে মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর সকল সৎবান্দাকে ভালোবাসবে এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে; আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অমান্যকারী আল্লাহর সকল বান্দাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখবে এবং তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে; তাছাড়া এটা মুসলিম ব্যক্তিকে তার কোনো কোনো ভাইকে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে বেশি মহব্বত ও আন্তরিকতার কারণে ভাই ও বন্ধু রূপে গ্রহণ করতে কোনো নিষেধ নেই; কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ এ ধরনের ভাই ও বন্ধু গ্রহণ করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করে বলেন: “মুমিন ঘনিষ্ঠ ও বন্ধত্বপূর্ণ ব্যক্তি; আর সে ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ নয়।”
তিনি আরও বলেন:
إنَّ حولَ العرشِ منابرُ من نورٍ عليها قومٌ لباسُهم نورٌ ووجوهُهم نورٌ ليسوا بأنبياءَ ولا شهداءَ يغبِطُهم النَّبيُّون والشُّهداءُ فقالوا : يا رسولَ اللهِ صِفْهم لنا فقال : هم المُتحابُّون في اللهِ والمُتجالِسون في اللهِ والمُتزاوِرون في اللهِ
“নিশ্চই আরশের চারপার্শে কতগুলো নূরের মিম্বার রয়েছে, যেগুলোর উপর একদল লোক অবস্থান করবে, যাদের পোশাকে নূর এবং চেহারাতেও নূর, তারা নবী নন এবং শহীদও নন, তাদের প্রতি ঈর্ষা করবে নবী ও শহীদগণ; সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল ﷺ আমাদের জন্য তাদের একটা বর্ণনা পেশ করুন; তখন তিনি বললেন: তারা হলেন আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে একে অপরকে মহব্বতকারী, পরস্পর আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য বন্ধুত্ব স্থাপনকারী এবং আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে একে অপরের সাথে সাক্ষাৎকারী।” –আসসুনানুল কুবরা, নাসায়ী, (১/৬১২)
আর এ ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের শর্ত হলো— তা একান্তই আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে, যা দুনিয়ার যাবতীয় ধোকা ও তার বস্তুগত সম্পর্ক থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হবে এবং তার একমাত্র কারণ বা উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর প্রতি ঈমান; অন্য কিছু নয়।
সুতরাং কোন ব্যক্তিকে দ্বীনি ভাই হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত আদবসমূহ রক্ষা করে চলতে হবেঃ
১. তাকে বুদ্ধিমান হতে হবে; কারণ, নির্বোধের সাথে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক ও সাহচর্যের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই; কেননা, অনেক সময় নির্বোধ মূর্খ ব্যক্তি উপকার করতে গিয়ে ক্ষতি করে বসে।
২. তাকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে; কেননা, দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তি বুদ্ধিমান হলেও অধিকাংশ সময় নিজের খেয়াল-খুশি মত চলে অথবা রাগের বশঃবর্তী হয়ে কাজ করে, ফলে সে তার সাথীর সাথে মন্দ আচরণ করে।
৩. তাকে আল্লাহভীরু হতে হবে; কারণ, প্রতিপালকের আনুগত্যের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাওয়া ফাসিক ব্যক্তি থেকে বন্ধুও নিরাপদ নয়; কেননা, সে কখনও কখনও তার সাথীর বিরুদ্ধে এমন অন্যায়-অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, যেখানে সে ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব বা অন্য কোনো সম্পর্কের খেয়াল করে না; কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে না, সে ব্যক্তি কোনো অবস্থাতেই অন্যকে সমীহ করে না।
৪. তাকে কুসংস্কার ও বিদ‘আত থেকে দূরে থেকে কুরআন ও সুন্নাহ’র অনুসারী হতে হবে; কারণ, কখনো কখনো বিদ‘আতপন্থীর বিদ‘আতের পঙ্কিলতা তার বন্ধুকে পেয়ে বসতে পারে; কেননা, বিদ‘আতপন্থী ও আত্মপূজারীকে বর্জন করা ও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা আবশ্যক; সুতরাং কিভাবে তাদের সাথে আন্তরিকতা ও বন্ধুত্ব স্থাপন করা সম্ভব হবে।
কোনো এক সৎব্যক্তি বন্ধু বা সাথী নির্বাচনে সংক্ষেপে এ আদবগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন, তিনি তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন: হে আমার আদরের ছেলে! যখন কোনো ব্যক্তিকে তোমার বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখন তুমি এমন ব্যক্তিকে বন্ধু বা সাথী হিসেবে গ্রহণ করবে— যখন তুমি তার খিদমত করবে, তখন সে তোমাকে রক্ষণাবেক্ষণ করবে; যদি তুমি তাকে সঙ্গ দাও, তবে সে তোমাকে সুন্দর করবে; যদি তোমার কোনো খাদ্যসংকট দেখা দেয়, তাহলে সে তোমাকে তা সরবরাহ করবে। তুমি তাকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে— যখন তুমি কোনো কল্যাণে তোমার হাত বাড়াবে, তখন সেও তার হাত বাড়াবে; আর যদি সে তোমার পক্ষ থেকে ভালো কিছু দেখে, তাহলে তা ভালো বলে গণ্য করে; আর মন্দ কিছু দেখলে তা থেকে বাধা প্রদান করে। আর তুমি তাকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে— যখন তুমি তার নিকট চাইবে, তখন সে তোমাকে দিবে; আর তুমি চুপ করে থাকলে, সে তোমার সাথে কথার সূচনা করবে; আর যদি তুমি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হও, তাহলে সে তোমাকে সান্ত্বনা দিবে। আর তুমি তাকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে— যখন তুমি তার সাথে কথা বলবে, তখন সে তোমার কথাকে সত্য বলে জানবে; আর তোমরা পরস্পর কোনো কাজের উদ্যোগ নিলে সে তোমাকে দায়িত্ব প্রদান করে; আর যদি তোমরা পরস্পর কোনো বিষয়ে মতবিরোধ কর, তাহলে সে তোমাকে অগ্রাধিকার দেয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!