এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ডাকা আন্দোলনের কারণে রোববার (২৯ জুন) দ্বিতীয় দিনের মত সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট সহস্রাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বন্দরের রাজস্ব আদায়ের উপর।
এদিকে এনবিআর সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কারণে রোববার সকাল থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমস হাউজের প্রধান ফটক বন্ধ রয়েছে। ভিতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও দেখা পাওয়া যায়নি। বন্দরে ঢোকার অপক্ষোয় ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দর এলাকায় কয়েক শ’ পণ্যবাহী ট্রাক দাড়িয়ে আছে। একইভাবে ভোমরা বন্দর থেকে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশী পন্যবাহী অসংখ্য ট্রাক। কাস্টমস অফিস বন্ধ থাকায় কোন পণ্য খালাস, যাচাই বা ছাড়করণ সম্ভব হচ্ছে না।
বন্দরের একজন ব্যবসায়ি জানান, গত তিনদিনে ভোমরা ও ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থল বন্দরে আমদানী রফতানীর অপেক্ষায় থাকা অন্তত ৫০০ ট্রাক আটকা পড়েছে। বিপাকে পড়েছে এসব ট্রাকের চালক ও হেলপাররা। একই সাথে কাজ বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে বন্দর সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। তবে, এবষিয়ে কাস্টমস এর কর্মকর্তা কর্মচারীরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
ভোমরা স্থলবন্দরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ বলেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ডাকা শাটডাউন এর কারণে ভোমরা স্থলবন্দর হতে প্রতিদিন ৩০/৪০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। এছাড়া প্রতিদিন ৫/৬ হাজার শ্রমিক এই বন্দরে কাজ করে। দুই দিন কাজ করতে না পেরে তাদের সংসার অচল হওয়ার পথে। এছাড়া ৪/৫ শ’ ট্রাকের চালক ও হেলপার মিলে প্রায় ৭/৮ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বন্দরের একজন ট্রাক চালক জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে চারদিন ধরে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আমরা চালকরা বন্দরে আটকা পড়ে আছি। গাড়ি এখন ভারতে ঢুকছে না। বন্দও অচল অবস্থায় রয়েছে। এতে করে আমরা চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছি। তারা দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের দাবি জানান।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা জানান, কাস্টম কর্মকর্তাদের এই আন্দোলনের কারণে বন্দর কার্যক্রম পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকরা। বর্ষার এই সময়টায় কাজ না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
তিনি আরও বলেন, বন্দর ঘিরে সাতক্ষীরায় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন। এখন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। দ্রুত এই সমস্যা সমাধান না হলে ক্ষতির পরিমাণ হবে ভয়াবহ।
প্রসঙ্গতঃ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ও চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের অপসারণের দাবিতে শনিবার (২৮ জুন) থেকে সারাদেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘শাটডাউন’ এবং রাজধানীতে ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির ডাক দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে ভোমরা বন্দরে ৫ ঘণ্টা কলম বিরতি পালন করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। এরপর শনিবার সকাল থেকে বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এএজে