দীঘল দ্বীপ দিঘলিয়ার লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণেরর দাবি দৌলতপুর খেয়াঘাট পার্শ্ববর্তী লঞ্চঘাটে স্থানান্তরের। এ গণদাবির পক্ষে ভুক্তভোগী জনগণের ব্যানারে দিঘলিয়া উপজেলার সামাজিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে চলতি মাস থেকে আন্দোলন শুরু করে। গণদাবির পক্ষে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দীঘল দ্বীপের হাজার হাজার ভুক্তভোগী এই যৌক্তিক দাবির পক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বপ্রণোদিত হয়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে রবিবার( ৩০ জুলাই) দৌলতপুর খেয়াঘাট পার্শ্ববর্তী লঞ্চঘাটে স্থানান্তর কমিটির উদ্যোগে খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ইয়াসির আরেফিন, খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুন অর রশিদ ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম (যুগ্ম সচিব) ‘র নিকট স্মারকলিপি এবং গণস্বাক্ষরের অনুলিপি প্রদান করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবাদী সংগঠন আলোর মিছিলের উপদেষ্টা শেখ আব্দুস সালাম, জেলা পরিষদ সদস্য ও সাবেক সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান ফারহানা হালিম, আলোর মিছিলের উপদেষ্টা সৈয়দ শাহজাহান আলী, সৈয়দ সেকেন্দার আলী, ডাঃ হাফিজুর রহমান, ঘাট স্থানান্তর কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক শেখ রবিউল ইসলাম রাজিব, যুগ্ম আহ্বায়ক ও আলোর মিছিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ তারেক, ব্রক্ষগাতী ব্লাড লাইনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাংবাদিক সৈয়দ জাহিদুজ্জামান, পরিচ্ছন্ন দিঘলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ রিয়াজ, সমন্বয়কারী সাজ্জাদ হোসেন, দিঘলিয়া ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সালাউদ্দিন বাবু, দিঘলিয়া উন্নয়ন সংস্থার রাতুল হোসেন, আন্দোলন কমিটির সদস্য আসমা আক্তার রুমা, নাজনীন আক্তার প্রমুখ।
জনগণের ব্যানারে এই যৌক্তিক দাবির পক্ষে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেছেন দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম। খুলনা গেজেটকে তিনি বলেন, দৌলতপুর খেয়াঘাট লঞ্চঘাটে স্থানান্তর এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের একটি ন্যায় সঙ্গত এবং যৌক্তিক দাবি। এই দাবিতে ইতিমধ্যে খুলনা জেলা প্রশাসকের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। মূলতঃ ঘাট স্থানান্তরের কাজটি করবে খুলনা জেলা পরিষদ। তিনি বলেন, খেয়া ঘাটতি পার্শ্ববর্তী লঞ্চঘাটে স্থানান্তরের জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ খুলনা গেজেটকে বলেন, গত ১৬ জুলাই আমি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় খুলনা জেলা প্রশাসকের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছি। তিনি বলেন, ঘাটের দিঘলিয়া অংশের টোয় আদায় করে জেলা পরিষদ আর দৌলতপুর অংশের টোক আদায় করে সিটি কর্পোরেশন। আমরা সিটি কর্পোরেশনকে বিষয়টা অবহিত করেছি। জেলা পরিষদের সিও স্যার কে অবহিত করেছি। গত ১৮ জুলাই স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক, খুলনা মোঃ ইউসুফ আলী (উপসচিব) স্যার দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে এসেছিলেন। আমরা বিষয়টি তাঁকেও অবহিত করেছি। যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন তাদের উচিত জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে বিষয়টির তুলে ধরে উত্থাপন করা।
এ দিকে দৌলতপুর খেয়াঘাট নিকটবর্তী লঞ্চঘাটে স্থানান্তরের দাবিতে ১৮ জুলাই পথের বাজারে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ গণস্বাক্ষরে অংশ নেয়। এরআগে গত ১৬ জুলাই এ দাবির পক্ষে দৌলতপুর খেয়া ঘাটের অপর প্রান্ত দিঘলিয়ার দেয়াড়া খেয়া ঘাটে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালিত হয়।
সাবেক সেনহাটী ইউপি সদস্য মোল্লা দিদার হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, দৌলতপুর খেয়াঘাট এই অঞ্চলের মানুষের জন্য একটা মরণ ফাঁদ। দৌলতপুর খেয়াঘাট পার হওয়ার পর কাপড় পট্টির সরু গলি দিয়ে কোন যানবাহন ছাড়া অসহায়, জরুরী এবং মুমূর্ষ রোগী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিকলাঙ্গ, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, বৃদ্ধ, শিশু, নারী-পুরুষদের ধাক্কাধাক্কি করে গলির ভিতর দিয়ে যেতে হয়। তিনি বলেন, আমি নিজে একজন অসুস্থ রোগী। প্রতিনিয়ত আমাকে দৌলতপুর খেয়াঘাট পার হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। কাপড় পট্টির সরু গলি দিয়ে স্বজনদের কাঁধে হাত ভর করে আমাকে গলি পার হতে হয়। আমার মতো এ দ্বীপের লক্ষাধিক মানুষ যুগ যুগ ধরে পারাপারে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে। আমরা অবহেলিত এই দ্বীপের মানুষ এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।
পরিবেশবাদী সংগঠন আলোর মিছিলের উপদেষ্টা ও ব্যাংকার মোল্লা মাকসুদুল আলম খুলনা গেজেটকে বলেন, দৌলতপুর বাজারের কাপড়ের পট্টির সরু গলি দিয়ে যুগ যুগ ধরে ক্রেতাদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে আমাদের যাওয়া-আসা করতে হয়। আমরা ভুক্তভোগী পারাপার যাত্রী এই বিড়ম্বনা থেকে আশু পরিত্রাণ চায়। তিনি দৌলতপুর খেয়া ঘাটের অপরপ্রান্ত দেয়াড়া খেয়াঘাট অনতিবিলম্বে পুনঃনির্মাণ এবং বিআইডব্লিউটিএ ‘র অনুমতি সাপেক্ষে দৌলতপুর খেয়াঘাট লঞ্চঘাটে স্থানান্তরের জোর দাবি জানান।
পথের বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডাঃ বি এম আলম কমিটির পক্ষ থেকে দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে খুলনা গেজেটকে বলেন, দৌলতপুর বাজারের কাপরের পট্টির সরু গলির ভিতর দিয়ে কোন যানবাহন ছাড়া মালামালসহ পারাপার যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যুগ যুগ ধরে আমরা এই এলাকার সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা ঘাটটি দিয়ে পারাপারে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সবার এই যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি দূরীভূত করার জোর দাবি জানান।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নতরীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গাজী আলী বাকের প্রিন্স খুলনা গেজেটকে বলেন, জন্মের পর, বুঝতে শেখার পর থেকে দেখে আসছি এতদঅঞ্চলের মানুষ কত কষ্ট করে ঘাটটি দিয়ে পারাপার হয়। এই ঘাট দিয়ে পার হয়ে একজন মুমূর্ষ কিংবা জরুরী রোগী নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। ভাটার সময় ঘাটের দুই প্রান্তের সিঁড়ি খাড়াভাবে স্থাপনের কারণে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের উঠানামা করতে হয়। ঘাটটি দিয়ে মোটরসাইকেল কিংবা সাইকেল ও পারাপারের কোন সুযোগ নেই। এছাড়া রাত ১২ টায় বাজারের ভিতর দিয়ে যাওয়া আসা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে পারাপার যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তিনি অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এদিকে খুলনা জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত দৌলতপুর বাজারের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খেয়া ঘাট বহাল রাখার দাবিতে গত ১৯ জুলাই খুলনা যশোর মহাসড়কের উত্তরা ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে দৌলতপুর বাজার উন্নয়ন কমিটি। কমিটি সাধারণ সম্পাদক নান্নু মোড়ল খুলনা গেজেটকে বলেন, ব্যবসায়িক স্বার্থে বাজার কমিটি এবং সাধারণ ব্যবসায়ীরা ঘাটটি বহাল রাখার পক্ষে। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ১২ টার পর বাজারের ভিতর থেকে খেয়াঘাটে যাওয়ার গলিপথগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
খুলনা গেজেট/কেডি