নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্চিত করার ঘটনার একমাস ১৫ দিন পর তিনি ফিরলেন কলেজে। বুধবার (০৩ আগষ্ট) বেলা ১২ টায় তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।
এসময় তাকে ফুলদিয়ে বরণ করে নেন নড়াইল ১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড সুবাস চন্দ্র বোস, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডঃ অচিন চক্রবর্তী, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, এলাকাবাসী, অভিভাবক সহ ছাত্র ছাত্রীরা।
উল্লেখ্য গত মাসের ১৮ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা দিয়ে লাঞ্চিত করার ঘটনার পর কলেজ বন্ধ হয়ে যায় এই ঘটনার ১ মাস ৫ দিন পর গত ২৪ জুলাই কলেজ খোলা হয় এবং ২৫ জুলাই থেকে এইচ.এস.সি পড়ুয়া ২য় বর্ষের ক্লাস নেওয়া শুরু হয়। কলেজ খুললেও অধ্যক্ষ এতদিন কলেজে আসেননি। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে কলেজের পরিবেশ। দীর্ঘ ১ মাস ১৫ দিনপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজে আসলেন। তার কলেজে আগমনে আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
এসময় শিক্ষার্থী তৃপ্তি বিশ্বাস, সাদিয়া ইসলাম জানান, দীর্ঘ ১মাস ৫দিন পর কলেজ খোলা এবং দেড়মাস পর অধ্যক্ষ কলেজে ফেরায় আমরা খুব খুশি। কলেজ বন্ধ থাকায় আমাদের লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হয়েছে, এখন কলেজ খুলেছে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো। এছাড়া স্বসন্মানে অধ্যক্ষকে ফিরিয়ে আনায় আমরা খুশি হয়েছি।
কলেজের শিক্ষকরা হুমায়ুন কবীর রিন্টু বলেন অধ্যক্ষ মহোদয়কে আমরা ফুলদিয়ে বরন করে নিয়েছি। তার আগমনে কলেজ আবার আগের মত করেই চলবে। সামনে পরীক্ষা কলেজ খোলায় শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ১৮ জুনের ঘটনা , কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারীর অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এটা আমি ভুলে যেতে চাই। দেশবাসী সবাইকে বলবো আমার জন্য দুঃখ কষ্ট না করার জন্য। আজকে আমি যে আনন্দ উপভোগ করছি, সবাই আমাকে যে সন্মান দিয়েছে। আমি বিগত দিনের সব সবকিছু ভুলে যেতে চাই। সবার জন্য কল্যান কামনা করি। আমি মনে করি সমাজে যারা চক্রান্তকারী, দুবৃত্ত তাদের সংখ্যা অত্যান্ত কম। দেশে ভাল মানুষের সংখ্যাই বেশী।
নড়াইল -০১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি বলেন, ভালবাসার একটা নজির স্থাপন, আমরা নতুন করে করলাম। আমি বিশ্বাস করি ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ এই অঞ্চলের মানুষের একটা গর্বের জায়গা। সেই গর্বের জায়গায় যিনি ভারপ্রাপ্ত পিন্সিপাল ছিলেন তার যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে , আমরা সবাই অনুধাবন করেছি এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা খুব অন্যায় করেছে। তাদের কাউকে আমরা ছাড় দেইনি।
উল্লেখ্য গত মাসের ১৮ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন-প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে পোস্ট মুছেননি। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীসহ বিক্ষুদ্ধ জনতা কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুদ্ধ জনতা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতারমালা পরিয়ে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে।
অধ্যক্ষ লাঞ্চনা ও পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিন বাদি হয়ে অজ্ঞাত ১৭০/১৮০ জনকে আসামি করে নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ প্রযর্ন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের একটি মোট দুটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়।এছাড়া ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা বিএল কলেজের অনার্স ফাইনাল বর্ষের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র মোঃ রহমত উল্লাহ বিশ্বাস ওরফে রনির (২৩) ছাত্রত্ব বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)শওকত কবিরকে খুলনায় বদলি করা হয়।