খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকা

গেজেট ডেস্ক

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। যার মধ্যে ০.৪৯ শতাংশ উদ্ধারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এর পরিমাণ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

সোমবার অর্থনীতি সমিতির অডিটরিয়ামে “বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৪-২৫: উন্নত বাংলাদেশ অভিমুখী বাজেট” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এই তথ্য জানান। এ সময় অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত উপস্থিত ছিলেন।

রাজস্বের বড় একটা অংশ কালোটাকা উদ্ধার করে আসবে- উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে সৃষ্ট মোট পুঞ্জীভূত কালোটাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পুঞ্জীভূত মোট কালোটাকার মাত্র ০.৯৮ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করা হচ্ছে, যেখান থেকে উদ্ধারকৃত আহরণ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে ওই সময়ে বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে ০.৪৯ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করা হয়েছে। যার পরিমাণ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আর রাজস্ব খাত থেকে আসবে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা।

কালোটাকা প্রসঙ্গে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, এসব টাকা উদ্ধারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। অর্থনীতিকে পরিচালিত করে রাজনীতি। সঠিক লাইনে ব্যবস্থা নিলে পদ্ধতি আছে। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম অন্যতম। এটা শতভাগ করতে পারলে কালোটাকার অবস্থান বের করা সম্ভব।

এবিষয়ে আবুল বারকাত বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় একটি গবেষণা করেছিল, যা প্রকাশ হয়নি। সেখানে বলা হয়েছিল বাংলাদেশে কালোটাকার পরিমাণ জিডিপি’র ৩৩ থেকে ৬৬ শতাংশ হতে পারে। অর্থনীতি সমিতির হিসাবে প্রতি বছরে গড়ে ৩৩ শতাংশের মতো কালোটাকার হিসাব দিয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে অর্থনীতি সমিতি। যার আকার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের বাজেটের চেয়ে ১.৫৭ গুণ বেশি। এর আগে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করেছিল বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।

অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে ১০ লাখ ২৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা আসবে রাজস্ব থেকে। অন্যদিকে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ এবং ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভর করতে চায় না প্রতিষ্ঠানটি। আর বাজেটের বাকি ৭.৮৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার ঘাটতি অর্থায়ন জোগান দেবে সম্মিলিতভাবে বন্ড বাজার (মোট ৯৫ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা; অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নের ৫৬.১ শতাংশ), সঞ্চয়পত্র বিক্রয় থেকে ঋণ গ্রহণ (মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি অর্থায়নের ১৪.৬ শতাংশ), এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব (মোট ৫০ হাজার কোটি টাকা, যেখান থেকে আসবে ঘাটতি অর্থায়নের ২৯.৩ শতাংশ)।

বিকল্প বাজেটে সরকারের আয়ের উৎস হিসেবে ২৭টি নতুন উৎসের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর, সেবা থেকে প্রাপ্ত কর, বিদেশি পরামর্শক ফি ইত্যাদি। এই বাজেটে ২৪টি বিষয়ে ৩৪১টি সুপারিশ করা হয়েছে।

আগামী ১০ বছরে ৭টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানান আইনুল ইসলাম। এগুলো হলো- ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত করা, বৈষম্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা, ধনীর সম্পদ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বণ্টন, উন্নয়নে দেশজ অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক ও আলোকিত করার সুযোগ তৈরি এবং শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হবে না। এই বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে দরিদ্র-নিম্নবিত্ত শ্রেণির অবস্থান থেকে শক্তিশালী টেকসই একটি মধ্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবস্থানে উত্তরণ করা সম্ভব।

জাতীয় বাজেট বাস্তবায়ন কতোটা হয়?

সরকারের বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি জানায়, বিগত কয়েক বছরে বাজেট বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রথম ৩ মাসে বাজেট ৫-৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়। ৬ মাসে এ বাস্তবায়ন হয় ১৪-১৫ শতাংশ। ৯ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয় ২৬-২৭ শতাংশ। বছরের শেষের দিকের এক/দেড় মাসে অনেক খরচ করা হয় এবং এ সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫ শতাংশের বেশি।

অর্থবছরের শেষের দিকে এত টাকা তাড়াহুড়ো করে খরচ হওয়ায় কাজের মান খারাপ হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই তাড়াহুড়োর কারণে বরাদ্দকৃত অর্থ নিয়ে নয়ছয় করার বড় ধরনের সুযোগ থাকে। বছরের শুরু থেকে বাজেট বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা রীতিমতো উদ্বেগজনক।

এদিকে ৬ই জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!