দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার(২৩ জুলাই) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘মিট দ্য ওকাব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। ওভারসিজ করসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দেশ গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে বিপন্ন হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আমরা এমন সময়ে উপনীত হয়েছি যখন আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসক গোষ্ঠী বাংলাদেশকে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। যে দেশের মানুষ ৫০ বছর আগে একটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এবং দীর্ঘ আড়াই দশক স্বাধীনতার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন ভূ-খণ্ড অর্জন করেছিল, আজকে ৫০ বছর পরে সে দেশের মানুষ এখন ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের রাষ্ট্রকে একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমাদের ভোটের অধিকার, বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। ভয় এবং ভীতির আবহাওয়া গোটা দেশে মানুষকে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। বাংলাদেশে এখন যে প্রক্রিয়ায় শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে—একটি হলো বল প্রয়োগ ও ভয় উৎপাদন। এনফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স, গুম, খুন, হত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পুলিশ হেফাজতে হত্যা, মিথ্যা মামলা এবং অনেকেই শুনলে অবাক হন, রাজনৈতিক কর্মী যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে; আমাদের প্রায় ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। কখনোই বাংলাদেশের মানুষের এই অভিজ্ঞতা ছিল না। এখন সুশীল সমাজের সদস্যরা কথা বলতে ভয় পান, সাংবাদিকরা লিখতে ভয় পান, বিচারকরা ন্যায় বিচার করতে ভয় পান এবং সাধারণ মানুষ বাসে, ট্রেনে, পাবলিক প্লেসে কথা বলতে ভয় পান।
রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন গণতান্ত্রিক স্পেস দেওয়া হয় না। সভা, মিছিল, গণতান্ত্রিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হয়। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ অসংখ্য নিবর্তনমূলক আইন প্রবর্তন করে ভিন্ন মত পোষণ করা অসম্ভব করে তুলেছে এই শাসক গোষ্ঠী। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলেছে। যে দেশে ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে যেত, সে দেশের মানুষ এখন আর ভোটকেন্দ্রে যায় না। মানুষের আস্থা আর কোনো নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর নেই, বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরও বলেন, আবার নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে শুরু করেছে। সরকার, সরকার দলীয় মন্ত্রী, নেতারা নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলছেন। উন্নয়নের মিথ তৈরি করা হয়েছে। ডামাডোল বাজানোর মধ্য দিয়ে মানুষকে বিপথে পরিচালিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, দেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের পার ক্যাপিটা ইনকাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। জিডিপি বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের দারিদ্র্য কমে আসছে কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। যে মেগা প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে সেখানে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। দারিদ্র্যের হার বেড়ে শতকরা ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে। কয়েক বছরে এই ঘটনা ঘটেছে। এটা আমাদের তথ্য নয়, সরকারি বিবিএস এই তথ্য দিয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের পথে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আপনারা দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী অবস্থা হয়েছে। সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। এর কারণ সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ। শিক্ষার্থী অ্যাডমিশনের ব্যাপারে, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয়করণ এবং যাদের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে সেখানেও দলীয়করণ। স্বাস্থ্য খাত ভেঙে পড়েছে। করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি, সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ অনেক কমে আসছে, বলেন ফখরুল।
চলমান লোডশেডিং প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক সময় এই সরকার শতকরা শতভাগ লোডশেডিং মুক্ত বলে উৎসব করেছে। সেই বিদ্যুতের অবস্থা কী আপনারা নিজেরাই দেখছেন। ঢাকা শহরে ১-২ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়, গ্রামাঞ্চলে যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে ৭-৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হবে।
এসব সমস্যা সরকার তৈরি করেছে। একটি কারণ দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের সম্পদ পাচার করছে বাইরে। আমরা যারা গণতান্ত্রিক দল, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তারা এই অবস্থার অবসান চাই, বলেন ফখরুল।
খুলনা গেজেট/ এস আই