বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার বাড়ছে এবং এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে চিন্তিত বলে কর্মকর্তারা বলেছেন। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, নানা জটিল রোগে আক্রান্ত বয়স্কদের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তাদের বেশিরভাগ একেবারে শেষ মুহুর্তে হাসপাতালে আসছেন-এই বিষয়কে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের ৩২ জনেরই বয়স ৫০ উর্ধ্ব। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীদের মধ্যে এপর্যন্ত মোট চার হাজার ৬৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের বয়স ৫০ এর উপরে। সরকারি হিসাবে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এখন শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার বলা হচ্ছে ১.৩৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেছেন, মৃত্যুর হার যে বাড়ছে, সেটা উদ্বেগের। তিনি উল্লেখ করেছেন, মৃত্যুগুলো পর্যালোচনা করে তারা কারণ চিহ্নিত করেছেন। তারা দেখেছেন নানা জটিল রোগে আক্রান্ত বয়স্কদের করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে শেষ অবস্থা না হলে হাসপাতালে আসছেন না।
অধ্যাপক আলম বলেছেন, “এটা অবশ্যই একটা উদ্বেগের। তবে আমরা গত কিছুদিনের মৃত্যু হার যদি আমরা পর্যালোচনা করি, তাহলে আমরা দেখবো সিংহভাগই ৬০ বছরের বা ৬০ উর্ধ্ব মানুষ এটাতে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষ করে যাদের কো-মরবিডিটি, অর্থাৎ একই সঙ্গে অন্য ধরণের রোগ রয়েছে, যেমন ক্যানসার, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি- এ সমস্ত রোগ যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রেই আমরা মৃত্যুর হারটা বেশি দেখছি।”
“এই মৃত্যুগুলো আমরা দেখেছি একেবারে দেরিতে তারা হাসপাতালে এসেছিল। তখন আর তাদের জন্য কিছু করার নাই। মানে শরীরের সব অর্গান ফেল করার পর তারা আসেন হাসপাতালে। তখন আসলে ডাক্তারদের করার কিছুই থাকে না।” তিনি আরও বলেছেন, মৃত্যুর হার নিয়ে তারা চিন্তিত হলেও সংক্রমণ বাড়ছে না এবং তা স্থির আছে বলে তারা মনে করেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজারের নিচে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাতে শনাক্তের হার ১২থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: মাহফুজা রিফাত মনে করেন, দেশে জীবন যাত্রার সবকিছু স্বাভাবিক করে দেয়ায় মানুষের ভয় কমে গেছে। এছাড়া চিকিৎসা নিয়ে মানুষের আস্থার অভাব রয়েছে। এই দু’টি কারণে মানুষ শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে চায়। এই পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে কর্তৃপক্ষ এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বার্তা দিতে পারেনি বলে তিনি মনে করেন।
“আস্থার অভাব। আরেকটা হচ্ছে, হয়তো মানুষ ভাবে আমার কিছু হবে না। সেই জায়গা বোধায় আমরা যথেষ্ট বার্তা দিতে পারিনি যে ঝুঁকিটা কোথায় এবং কখন হাসপাতালে সেবা নিতে যেতে হবে।”
তবে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেছেন, বয়স্করা শনাক্ত হলেই যেনো হাসপাতালে যান, এই প্রশ্নে মানুষকে সচেতন করার বিষয়কে এখন অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
“যারা বয়স্ক মানুষ উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, যদি প্রমাণিত হয় যে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাহলে অবশ্যই অবশ্যই তারা ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। ডাক্তাররা যদি মনে করেন, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করবেন। আর ডাক্তার যদি মনে করেন বাসায় রেখে চিকিৎসা করাবেন। সেই সিদ্ধান্ত ডাক্তার নেবেন।কিন্তু নিজে নিজে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না।”
অধ্যাপক আলম আরও বলেছেন, “স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একথাটা বার বার বলতে চাই যে বয়স্ক মানুষ বিশেষ করে ৫০ উর্ধ্ব যাদের নানা জটিল রোগ আছে, তারা কোন ক্রমেই বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেবেন না। আমাদের হাসপাতালগুলো অনেক বিছানা খালি আছে। আপনারা বাড়িতে বসে না থেকে দয়া করে হাসপাতালে আসুন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।” তিনি আরও জানিয়েছেন, পরীক্ষাও বাড়াতে চাইছেন। সেজন্য সাত দিনের মধ্যে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করার চেষ্টাও তাদের রয়েছে। সূত্র : বিবিসি।
খুলনা গেজেট/এনএম