অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড। সময়ের প্রয়োজনে এই হৃৎপিণ্ডকে বড় করতেই হবে। কারণ ছোট হৃৎপিণ্ড দিয়ে বেশিদূর এগোনো যাবে না। বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিদেশি অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্দরে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। তারা নিজেরা বিনিয়োগ করবে সবশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার করবে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর তারা আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাবে। ততদিনে আধুনিক প্রযুক্তির বন্দর চালাতে আমাদের দেশের মানুষরা অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর বুধবার সকালে প্রথমবাদের মতো চট্টগ্রাম সফরে আসেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিমানবন্দরে নেমে প্রথমেই ছুটে যান চট্টগ্রাম বন্দরে। বিভিন্ন টার্মিনাল ও জেটির অপারেশন কাজ ঘুরে দেখেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা একটি বন্দর বা দুই-একটি টার্মিনাল নিয়ে কথা বলছি। বিশ্বের অনেক ছোট ছোট দেশ তাদের ২০/৩০ টা বন্দর নিয়ে কথা বলে। তাদের দিকে তাকালে নিজেদের খুব ক্ষীণ মনে হয়। বিশ্বের অনেক ছোট ছোট দেশ আধুনিক বন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়েছি। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে, আর নয়। চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। এই হৃৎপিণ্ডের চিকিৎসা প্রয়োজন। সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দরে বিদেশি অপারেটরের কথা এলে অনেকেই বলেন বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। অথচ তারাই আবার চিকিৎসার জন্য হরহামেশাই বিদেশে যাচ্ছেন।
ড. ইউনূস বলেন, বন্দরে বিদেশি অপারেটরদের কাজ করার সুযোগ দিলে বেশ কিছু সুবিধা আছে। যার অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এখানে আমাদের একটি টাকাও বিনিয়োগ করতে হবে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে বন্দর ব্যবস্থাপনায় তারা বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। বিভিন্ন দেশের অসংখ্য বন্দর তারা পরিচালনা করেছে। আমাদের সুবিধা হবে আধুনিক ব্যবস্থাপনা আমরা পাবো। প্রযুক্তির সবশেষ অংশ থেকে আমরা শুরু করতে পারবো।
সরকার প্রধান বলেন, অনেকে বলেন বিদেশি অপারেটর এলে শ্রমিকদের চাকরি চলে যাবে। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠান ইউরোপ থেকে শ্রমিক এনে বন্দর চালাবে না। আমাদের দেশের মানুষই বন্দরে কাজ করবে। বরং আধুনিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কাজ করলে দক্ষ জনবল তৈরি হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে যদি বিদেশি অপারেটররা কাজ শুরু করতে পারেন তাহলে ২০৩৬ সালের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের আরো যেসব বন্দর পরিচালনা করে সেসব বন্দর বাংলাদেশিরাই লিড দেবে।
এর আগে সকাল ৯ টা ১৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদত হোসেন, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বন্দরের পর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন, চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের দলিল হস্তান্তর, মহানগরীর জলাবদ্ধতা সম্পর্কিত ব্রিফিং, অক্সিজেন টু হাটহাজারী সড়ক উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্রিফিং ও আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, চবির অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি ও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অংশ নেবেন।
খুলনা গেজেট/এনএম