এ যেন রূপকথার গল্প। বিনা পুঁজিতে যার ব্যবসার শুরু। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অদম্য ইচ্ছা শক্তি, সাহস, মনোবল আর সততা নিয়ে শুরু হয় যার পথ চলা। সাথে যোগ হয় ব্যাংকের সামান্য কিছু লোন। বদরুল আলম মার্কিনের ব্যবসার শুরুটা হয়েছিলো এভাবে। সেই বদরুল আলম মার্কিন দেশের রপ্তানি খাতে অবদান রাখার জন্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফির জন্য মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২১ সালের জন্য বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি)’র সম্মাননা কার্ড পেয়েছেন। এ বছর খুলনা থেকে কাঁচা পাট রপ্তানিকারক হিসেবে একমাত্র তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘সারতাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল” এ ট্রফির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। সারতাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ছাড়াও ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের আরও ৭২টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাতীয় রপ্তানি ট্রফির জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
পড়াশোনা শেষ করে ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় ভুগছিলেন ২৫ বছর বয়সী টগবগে যুবক বদরুল আলম মার্কিন। পিতা মোঃ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন দৌলতপুর মুহসিন এলাকার বিশিষ্ট পাট ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম একজন। পিতার উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণায় ২০০৬ সালে পাটের ব্যবসায় মনোযোগী হন। পিতার সাফ কথা ব্যবসা শুরু করলেও পূজির ব্যবস্থা তোমাকে করতে হবে। পিতার কথায় মনে কষ্ট পেলেও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সাহস, সততা আর মনোবল নিয়ে পিতার ব্যবসার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে দৌলতপুর মুহসিন এলাকায় শুরু করেন পাটের ব্যবসা। ভাগ্য তার সহায় হয়। ব্যবসার শুরুতে ব্যাংক থেকে কিছু টাকা লোন পেয়ে যান। শুরুতে খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন পাট কোম্পানি এবং সরকারি জুট মিলগুলোতে পাট সরবরাহের কাজ শুরু করেন। এভাবে চলতে থাকে ৫ বছর। ২০০৯ সালে রপ্তানিকারক হিসেবে বিদেশে কাঁচা পাট রপ্তানির লাইসেন্স করেন।
দৌলতপুর রেলিগেট এলাকার বিভিন্ন পাট গোডাউন এবং জুটপ্রেস ভাড়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে কাঁচা পাট ক্রয় করে সেগুলো শ্রমিকদের মাধ্যমে প্রসেসিং করে বিদেশে রপ্তানি শুরু করেন। তার ব্যবসায়িক সুনাম এবং সততার কারণে ভারত, পাকিস্তান এবং নেপালের ব্যবসায়ীরা তার প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচা পাট ক্রয় করতে শুরু করেন। এরপর থেকে মার্কিনের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার ব্যবসায়িক সুনাম এবং সততার কারণে একের পর এক সাফল্য তাকে ধরা দিতে থাকে। বৈশ্বিক মহামারী করোনায় যখন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতি বিধ্বস্ত সেই সময়ও মার্কিন একচেটিয়া ব্যবসা করেছেন। কয়েক হাজার টন পাট বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছেন।
মার্কিনের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খানজাহান আলী থানার ইস্টার্ন জুট মিল এলাকায়। ১৯৯৬ সালে পিতার ব্যবসায়ীর কারণে দৌলতপুর মুহসিন এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
অত্যন্ত ভদ্র, বিনয়ী এবং সাদা মনের একজন মানুষ। ৪৯ বছর বয়সে একজন সফল রপ্তানিকারক হিসেবে দেশের রপ্তানি খাতে জাতীয় রপ্তানি ট্রফির জন্য নির্বাচিত এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে (সিআইপি)’র সম্মাননা প্রাপ্ত হন। পরিবারের সদস্যের কাছে তিনি দেবতাতুল্য একজন মানুষ। খুবই ধার্মিক প্রকৃতির। সহধর্মিনীকে সাথে নিয়ে এ বছর পবিত্র হজ্ব পালন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বদরুল আলম মার্কিন দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা। স্ত্রী, কন্যা, মা, ২ ভাইসহ যৌথ পরিবার নিয়ে বসবাস করেন দৌলতপুর থানার রেলিগেট আকাঙ্ক্ষা আবাসিক এলাকায় পিতার তৈরি “সিরাজ মঞ্জিল” বাড়িতে।
দেশের সর্বোচ্চ কাঁচা পাট রপ্তানিকারক নির্বাচিত এবং সিআইপি’র মর্যাদা লাভ করায় খুলনা গেজেটের কাছে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বদরুল আলম মার্কিন বলেন, শুরু থেকেই আমি সততা এবং নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। বিশেষ করে একজন কাঁচা পাট রপ্তানিকারক হিসেবে সর্বদা দেশের সুনাম এবং স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। সততা এবং নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা করে এত বড় সম্মান অর্জনে আমি খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত। আজ আমার পিতা বেঁচে থাকলে তিনি এই অর্জনে আরও বেশি উৎফুল্ল এবং আনন্দিত হতেন। সুনামের সাথে ব্যবসা করে, সততার সাথে তিনি যেন জীবনযাপন করতে পারেন এ জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম