ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল ও বন্যার তাণ্ডবে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের শহর দেরনা পুরোপুরি বিধ্বস্ত। শহরের বাতাসে লাশের গন্ধ। ওই শহরসহ অঞ্চলটিতে ইতিমধ্যে ১১ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবের পাঁচ দিন পর গতকাল শুক্রবার বাড়ি থেকে ৬০ মাইল দূরে পাওয়া গেছে মানুষের লাশ। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকেও উদ্ধার হচ্ছে লাশ। কোনো কোনো এলাকায় দেওয়া হচ্ছে গণকবর। স্যাটেলাইট থেকে তোলা বিভিন্ন ছবিতে দেখা গেছে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যায় দেরনার ৩০ শতাংশ অঞ্চল একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শহরটির ৩০ হাজারের বেশি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দেশটির জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক অঙ্গসংগঠন ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওচা)।
বিবিসি জানাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল গত রবিবার আঘাত হানলে দুটি বাঁধ ভেঙে দেরনা শহর বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পানির তোড়ে ধসে পড়ে বহু ভবন। কোনো কোনো এলাকায় পঞ্চমতলার বাসিন্দারাও ঘরে আটকা পড়ে মারা যান। উদ্ধারকর্মীরা এখনো ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিত মানুষের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।
ঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার পর বাসিন্দারা জানান, শহরের বাইরে দুটি বাঁধ ধসে পড়লে তারা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। বন্যার পানি ওয়াদি দেরনা উপত্যকার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পরে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে ভবনগুলো ভেঙে পড়েছে এবং লোকজন সমুদ্রে ভেসে গেছে।
গতকাল শুক্রবার লিবিয়া রেড ক্রিসেন্টের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, দেরনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। ত্রাণ সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল মেরি এল-ড্রেস জানিয়েছেন, ভূমধ্যসাগরীয় শহরটিতে আরও ১০ হাজার ১০০ জন নিখোঁজ রয়েছে। এর আগে, সবশেষ দেশটির স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষ দেরনায় মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৫০০ বলে জানিয়েছিল। দেরনা শহরের মেয়র আবদেল মোনেইম আল-ঘাইত অবশ্য আশঙ্কা করেছেন, স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় নিহতের সংখ্যা ২০ হাজারের পৌঁছাতে পারে।
শহরের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গেও কথা বলেছেন মেয়র। তিনি বলেন, আমাদের এখন এমন বিশেষায়িত উদ্ধারকারী দল দরকার, যারা মৃতদেহ উদ্ধারে পারদর্শী। তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ ও পানির নিচে যেসব মরদেহ পড়ে আছে, সেগুলো থেকে রোগ ছড়াতে পারে। আমি ভয় পাচ্ছি, এতে শহরে মহামারী ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি জানান, সাগরে এমন লাশও পাওয়া গেছে যারা ঘটনার রাতে ৬০ মাইল দূরে এলাকায় থাকতেন। ওই রাতে পানির তোড়ে তারা ভেসে এসেছেন সাগরে।
এদিকে লিবিয়ায় মানবিক সহায়তা পাঠাতে বিশ্বের ধনী দেশ ও দাতাগোষ্ঠীগুলোর কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক অঙ্গসংগঠন ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওচা)। শুক্রবার ইউএনওচা থেকে দেওয়া এক বিবৃতির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। ইউএনওচার শুক্রবারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশ্বের মানচিত্র থেকে দেরনা ও তার আশপাশের এলাকার জনবসতি প্রায় মুছে গেছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুসারে, এ ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেরনা ও তার আশপাশের এলাকার অন্তত ৮ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ এবং তাদের মধ্যে চরম বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ। দুর্গত এই লোকজনকে জরুরি খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসেবা উপকরণ সরবরাহ করতে আমাদের জরুরি ভিত্তিতে ৭১ মিলিয়ন (৭ কোটি ১০ লাখ ডলার) প্রয়োজন।
খুলনা গেজেট/এইচ