খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

দেবহাটায় থামছে না নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা : আরোও দু’টি মামলা, গ্রেপ্তার ৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ও সখিপুর ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে থেমে থেমে চলছে হামলা, মারপিটসহ একের পর এক সহিংস ঘটনা।

গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে এপর্যন্ত এ দুটি ইউনিয়নে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। যাতে কুলিয়া ইউনিয়নের বিজয়ী চেয়ারম্যান ও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছাদুল হক এবং পরাজিত আ’লীগের দলীয় প্রার্থী আসাদুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা আহত হয়েছেন। সখিপুর ইউনিয়নে পৃথক কয়েকটি ঘটনায় এক গ্রাম পুলিশসহ পরাজিত আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক হোসেন রতনের কয়েকজন সমর্থকও আহত হয়েছেন।

এদিকে এসব ঘটনায় এপর্যন্ত কুলিয়া ও সখিপুর ইউনিয়নের বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের ৫৫ জন কর্মী সমর্থকের নাম উল্লেখসহ শতাধিক ব্যাক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে দেবহাটা থানায় পৃথক তিনটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। সর্বশেষ দায়েরকৃত কুলিয়ার দেউকুল গ্রামে আছাদুল হকের সমর্থকদের ওপর পরাজিত প্রার্থী আসাদুল ইসলামের সমর্থকদের হামলা, মারপিট এবং সখিপুরের গ্রাম পুলিশ ফারুক হোসেনকে মারপিটের ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলায় বুধবার রাতে কুলিয়া ও সখিপুর ইউনিয়নের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে পুলিশ দেবহাটা কুলিয়া এলাকা থেকে আরো ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি কুলিয়ার পুষ্পকাটিতে বিজয়ী মেম্বর রব্বানী ও পরাজিত মেম্বর প্রার্থী রিপনের সমর্থকদের মধ্যে হামলা, মারপিট ও কয়েকটি বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। যে ঘটনার দায় শেষমেষ বিজয়ী চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আছাদুল হকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তার ৩৫ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলাসহ ১৩জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এমনকি আছাদুল হককেও মধ্যরাতে থানায় তুলে নিয়ে দুঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় আছাদুল হককে ছেড়ে দিলেও, হামলার ঘটনার নেপথ্যে থাকা পরাজিত মেম্বর প্রার্থী শাহীনুজ্জামান রিপনের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আছাদুল হকের নেতাকর্মীদের কারাগারে প্রেরণ করে পুলিশ। যদিও গ্রেপ্তারের একদিন পরই জামিনে মুক্ত হয়েছেন আছাদুল হকের ১৩জন কর্মী-সমর্থক।

এদিকে এঘটনায় থানায় মামলা করতে না পেরে পুষ্পকাটির হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার নেপথ্যে থাকা শাহীনুজ্জামান রিপনকে প্রধান আসামী করে বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরার ৭নং আমলী আদালতে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করেন পুষ্পকাটি গ্রামের রজব আলীর ছেলে ফারুক হোসেন এবং উত্তর কুলিয়া গ্রামের আইফুল রহমানের ছেলে পারভেজ হোসেন বাবু। বাদীর আবেদন গ্রহণ করে দেবহাটা থানায় মামলা দু’টি এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই দু’টি মামলার আরজিতে শাহীনুজ্জামান রিপনকে প্রধান আসামী সহ আরোও ৯জনকে এজাহার নামীয় আসামী করা হয়েছে। যাদের প্রত্যেকেই কুলিয়ার পরাজিত আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুল ইসলাম এবং পুষ্পকাটির পরাজিত মেম্বর শাহীনুজ্জামান রিপনের অনূসারী।

অপরদিকে মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিন সখিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে জনরোশে পড়ে হামলা ও বেদম মারপিটের শিকার হন সখিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ ফারুক হোসেন। পরিষদ থেকে গোপন নথি সরানো হচ্ছে বলে ধারনা করে তার ওপর হামলা চালানো হয়। বর্তমানে সে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এঘটনায় ইউপি সদস্য নির্মল মন্ডলকে প্রধান আসামী করে সেখানকার পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আজিজ ও বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলামের ৯জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ৩০/৩৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে হামলার শিকার গ্রাম পুলিশ ফারুকের মা ফতেমা বেগম বাদী হয়ে দেবহাটা থানায় একটি মামলা (নং- ১/১১৯) দায়ের করে। এছাড়া বুধবার নির্বাচন পূর্ব হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুলিয়ার দেউকুল গ্রামে বিজয়ী চেয়ারম্যান আছাদুল হকের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় পরাজিত আসাদুল ইসলামের সমর্থকরা। এতে আছাদুল হকের দুই সমর্থক শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আলেয়া খাতুন গুরুতর আহত হয়। তারা বর্তমানে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই ঘটনায় দেউকুল গ্রামের মৃত কাশেম বিশ্বাসের ছেলে আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরোও ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে দেবহাটা থানায় পৃথক আরেকটি মামলা (২/১২০) দায়ের করেন। এ দুটি মামলায় বুধবার রাত পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, নির্বাচনের পর থেকে এপর্যন্ত কুলিয়া ও সখিপুর ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দেবহাটা থানায় কুলিয়ার দু’টি ও সখিপুরে একটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। এদু’টি ইউনিয়ন ছাড়া উপজেলার অপর তিনটি ইউনিয়নের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবে, কিন্তু তা নিয়ে কোন প্রকার সহিংস ঘটনায় না জড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। এর পরও যারা এসব সহিংস ঘটনায় সম্পৃক্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!