পরণে জিন্সের প্যান্ট, গায়ে টি শার্ট, হাতে দামি মোবাইল, চলাফেরায় খুবই স্মার্ট। দেখে বোঝার উপায় নেই এরা জন্মগত বাক প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারে না। সাধারণ মানুষের মত এদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-ভালবাসা, ভালো মন্দ বোঝার অনুভূতি সবই আছে। নেই শুধু কথা বলার সামর্থ্য।
প্রতিদিন বিকালে এ সকল বাক প্রতিবন্ধীদের আড্ডা বসে দৌলতপুর রেলস্টেশন সংলগ্ন স্মার্ট কফি হাউজের সামনে। ঘড়ির কাঁটায় যখন বিকাল ৫ টা, তখন থেকে একে একে সকল বাক প্রতিবন্ধীরা আসতে শুরু করে স্মার্ট কফি হাউজের সামনে। নিজেদের মধ্যে চলে আড্ডা, খুনসুটি, আর চা কফি পানের। যা চলে রাত ১০ টা পর্যন্ত। মাঝে মধ্যে এদের বাক প্রতিবন্ধী বান্ধবীরাও স্থানটিতে এসে আড্ডা জমায়। মুখ দিয়ে কথা বলতে না পারলেও এরা ইশারা এবং আকার ইঙ্গিতে এদের যাবতীয় মনের ভাব প্রকাশ করে। নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের জন্য ইশারা ইঙ্গিত শেখার জন্য এদের জন্য আলাদা বিদ্যাপীঠ রয়েছে।
স্মার্ট কফি শপের মালিক লিটন খুলনা গেজেটকে বলেন, বাক প্রতিবন্ধী হলেও এদের আচার-আচরণ, লেনদেন খুবই ভালো। এরা প্রতিদিন আমার দোকান থেকে চা কফি খায়। যেটা খায় তার পয়সা পরিশোধ করে দেয়। কখনও বাকিতে খায় না। বাকি চায়ও না। নিজেদের মধ্যে কিংবা অন্য কারো সাথে এরা কখনও ঝগড়া বিবাদ মারামারি এ জাতীয় কিছু করে না। প্রতিদিন ১৫-২০ জন আমার দোকানের সামনে আড্ডা দেয়। শুক্রবারে স্ত্রী সন্তানদের সাথে করে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে এদের বান্ধবীরা এসে এদের সঙ্গে আড্ডা দেয় তারাও বাক প্রতিবন্ধী। নিজেদের মধ্যে ইশারায় ভাব ভঙ্গি আদান-প্রদান করে। ভিডিও কলে বন্ধু, বান্ধবীদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আকার ইঙ্গিত এবং ইশারায় মনের ভাব প্রকাশ করতে দেখা যায়।
দৌলতপুর বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী সৈয়দ হাওলাদার বলেন, আমি প্রতিদিন বিকালে এখানে চা খেতে আসি। এদেরকেও প্রতিদিন এখানে আড্ডা দিতে দেখি। এরা খুব ভালো মনের মানুষ। এদের আচার আচরণ আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে দেখি এদের স্ত্রী, সন্তান, বান্ধবীরাও সবাই একত্রিত হয়ে আড্ডা দিচ্ছে। নিজেদের মধ্যে ইশারায় ভাব বিনিময় করছে।
স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, এদের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক দিন থেকে। একই সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে এরা সবাই আমাকে ওদের বন্ধু মনে করে। আমি ওদের সঙ্গে অনেক ইয়ার্কি ফাজলামি করি। ওরা কখনো রাগান্বিত হয় না। সবাই খুব ভালো। আমি ওদের ভাষা অনেক কিছুই বুঝি। মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে ওদের মতের অমিল হয়। আবার ঠিক হয়ে যায়। গৌতম শাহ নামে ওদের একজন লিডার আছে। সে সব সময় ওদের সুবিধা অসুবিধা গুলো দেখাশোনা করে থাকে। বাকি সবাই তার কথা শুনে এবং তাকে সমীহ করে চলে। নতুন রাস্তার মোড়ে এদের আলাদা অফিস রয়েছে। ওখানেও তারা আড্ডা দেয়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন মাগরিবের আগে এরা এখানে এসে জড়ো হয়। খুব সুন্দর ভাবে নিজেদের মধ্যে ইশারায় মনের ভাব আদান প্রদান করে। দেখতে আমাদের খুব ভালো লাগে। এরা কখনও কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না। এদের মধ্যে যে এত ভ্রাতৃত্ব আছে তা নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। সবাই খুবই সহজ সরল। আমরা যারা আছি এদেরকে খুব ভালো চোখে দেখি। এদের প্রতি আমরা খেয়াল রাখি।
খুলনা গেজেট/এনএম