দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত যুবলীগনেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আরিফ হোসেন (৪০)’র মৃতদেহ মঙ্গলবার (২৫ জুন) বাদ আছর খানাবাড়ী বালিকা বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে জানাযা শেষে মহেশ্বরপাশায় দাফন করা হয়। এর আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়না তদন্ত শেষে তার মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছালে পিতা-মাতা স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। নিহত আরিফ হোসেন আড়ংঘাটা থানাধীন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) পকেট গেট সংলগ্ন খানাবাড়ী এলাকা ও যোগীপোল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। তার পিতার নাম মোঃ আমির হোসেন। তিনি সিআইডি পুলিশে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে আরিফ ছিলেন সবার বড়।
আরিফের জানাযায় অংশ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম কামাল হোসেন এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, আরিফের খুনী যত বড়ই শক্তিশালী হোক গ্রেপ্তার হবে।
আড়ংঘাটা থানা অফিসার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেন খুলনা গেজেট কে বলেন, খুব দ্রুতই হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হবে। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের কোনক্রমেই ছাড় দেওয়া হবে না। নিহতের পরিবার ভিকটিমের দাফন শেষে মামলা করলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, আরিফের দাদার বাড়ি কালিয়া উপজেলার পিড়ালি গ্রামে। ২৫/৩০ বছর পূর্বে তার বাবা ফুলবাড়ীগেট খানাবাড়ী এলাকায় জমি ক্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আরিফের জন্ম এবং বেড়ে ওঠে এই এলাকাতেই। আরিফের অন্য দুই ভাই আসিফ এবং হাসিব চাকুরীর সুবাদে একজন চিটাগাং এবং অন্যজন টেকেরহাটে স্বপরিবারে থাকেন। আরিফ পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে কুয়েট পকেট গেটের খানাবাড়িতে বসবাস করতেন। ১৩ বছর পূর্বে আরিফ দুই বছরের ব্যবধানে দুই বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী মুক্তির দুই ছেলে। দ্বিতীয় স্ত্রী শামীমা শারমীন শিউলি নিঃসন্তান।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, নিহত আরিফ হোসেন খানজাহান আলী থানার ৩৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের আহবায়ক ও দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপোল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি হেরে যান। এলাকায় আরিফের বেশ প্রভাব ছিলো। দাপটের সাথে চলাফেরা করতেন। সার্বক্ষণিক পাহারাদার হিসেবে একজন সহযোগী নিয়ে চলাফেরা করতেন। ঘটনার সময় ওই সহযোগী তার সাথে থাকলেও তাকে রক্ষা করতে পারেননি। এলাকার মানুষের যেকোন বিপদ আপদে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। টাকা পয়সার কোন অভাব ছিল না। কুয়েটে এক সময় ২/১ টস ঠিকাদারী কাজ করেছেন। সর্বশেষে জমিজমা কেনাবেচার দালালি করতো। ২ কোটি টাকা মূল্যের একটি জমির ক্রয় বিক্রয়ের দালালিকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে একটি পক্ষের বিরোধের সৃষ্টি হয়। নিহত আরিফের মা বিলাপ করে বলছিলেন, জমিজমা ক্রয় বিক্রয়ের বিরোধের কারণে আমার ছেলে খুন হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরিফের এক স্বজন বলেন, এখানে এলাকার স্থানীয় রাজনীতির গ্রুপিংয়ের কোন বিষয় নয়। এলাকার লোকজন তাকে খুব ভালোবাসতো। এখানে দুই কোটি টাকা মুখ্য বিষয়। হত্যার পিছনে দুই কোটি টাকার একটি ব্যাপার থাকতে পারে। এখানে টাকা-পয়সার একটা স্বার্থ আছে। যেহেতু দুই কোটি টাকা নিয়ে একটি ঝামেলা। এখানে কিলিং মিশন হয়েছে। এলাকার মানুষ তাকে মারলে বড়জোড় কোঁপাতে পারে। এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে না।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৪ জুন) রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে কুয়েট পকেট গেট সংলগ্ন নিজ বাড়ির সামনে বসে যুবলীগ নেতা আরিফ হোসেন মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় ফুলবাড়িগেটের দিক থেকে মোটরসাইকেলে তিনজন দুর্বৃত্ত প্রথমে তার বাম পাশে বগলের নিচে একটি গুলি করে। এ সময় আরিফ পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে পা দিয়ে ধরে মাথায় আরও দুইটি গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে কুয়েট সড়ক দিয়ে খুলনা- মোংলা হাইওয়ে বাইপাস সড়কের দিকে চলে যায়। দুর্বৃত্তের সবার মাথায় হেলমেট ছিলো। নিহত আরিফের ১১ বছরের ছেলে আরিয়ান বাড়ির সামনে থেকে তার বাবাকে পা দিয়ে ধরে গুলি করার ঘটনা প্রত্যক্ষ করে চিৎকার করতে থাকে। রাতে এ ঘটনার পর থেকেই ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, র্যাব, পিবিআই, সিআইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপরতা শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে 7 পয়েন্ট 55 মডেলের পিস্তলের গুলির খোসা উদ্ধার করে।
সর্বশেষ আড়ংঘাটা থানাসূত্রে জানা যায়, হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তবে মামলা নথিভুক্ত না হওয়ায় আটককৃতদের নাম জানা সম্ভব হয়নি।
খুলনা গেজেট/কেডি