দুর্নীতির ওপর প্রতিবেদন করে সাড়া ফেলে দেয়া ভারতীয় সাংবাদিক মুকেশ চন্দ্রকরের মৃতদেহের খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। গত শনিবার দেশটির ছত্তিশগর জেলার একটি সেপটিক ট্যাঙ্কে পাওয়া গেছে সাহসী ওই সাংবাদিকের মৃতদেহ। বছরের প্রথম দিন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে পুলিশের কাছে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করে তার পরিবার। এর ভিত্তিতে মুকেশের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে গত শুক্রবার বিজাপুর শহরের একটি নির্মাণাধীন ভবনের সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় মুকেশের মৃতদেহ। সরকারি প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে অনেক গণমাধ্যমকর্মী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, ভারতীয় ওই সাংবাদিকের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাদের মধ্যে তার দুই আত্মীয় রয়েছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেছে স্থানীয় গণমাধ্যমের একটি পর্যবেক্ষক দল। ২ জানুয়ারি পর্যন্ত হত্যার বিস্তারিত ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ। তবে ৩ জানুয়ারি অধিক তদন্তের পর মুকেশের মৃতদেহের সন্ধান পেয়েছে তারা।
স্থানীয় পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ব্যাডমিন্টন কোর্টের কাছে একটি সেপটিক ট্যাঙ্কে মুকেশের মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছি। সেসময় ভারি স্ল্যাব দিয়ে ট্যাঙ্কের মুখটি বন্ধ করা ছিল। মুকেশের শরীরে ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে সজোরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন মুকেশ। সম্প্রতি সরকারি নির্মাণ প্রকল্পে বিশাল দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন তিনি। বাস্তার জংশন নামে একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে তার। নৃশংসভাবে হত্যার পর রাজ্য সরকারের কাছে ‘মামলার সত্যতা সম্পর্কিত’ প্রতিবেদন চেয়েছে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া। তরুণ সাংবাদিকের মৃত্যুকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে অভিহিত করেছেন স্থানীয় রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী। এক্সের এক পোস্টে তিনি বলেছেন, এরই মধ্যে ঘটনার তদন্তে বিশেষ টিম গঠন করেছে সরকার।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সাংবাদিকের মৃত্যুতে গ্রেপ্তারকৃতদের একজন তার আপন চাচাতো ভাই। এছাড়া প্রধান সন্দেহভাজনদের একজন ডেভেলপার কোম্পানির মালিক সুরেশ চন্দ্রকরও মুকেশের আত্মীয়। যিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা।
সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির প্রতিবেদন করে প্রাণ হারানো ভারতে নতুন কিছু নয়। এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে সুভাষ কুমার মাহাতো নামের আরেক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিককে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন ওই সাংবাদিক। এর জেরে তার বাসভবনের বাইরে তাকে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত চার ব্যক্তি।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা পর্যবেক্ষক সংস্থা রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্সের তথ্য বলছে, ভারতে প্রতি বছর গড়ে তিন থেকে চার জন সাংবাদিক তাদের পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে হত্যার শিকার হন। যাতে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে মোদি শাসিত ভারত।
খুলনা গেজেট/এএজে