সারাদেশে অনেকক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। রোববার (১০ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বিল–২০২৩ পাসের আলোচনায় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাদারিত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। এ লক্ষে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পাসের জন্য বিলটি জাতীয় সংসদে তোলেন। জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি পাস হয়।
বিলে বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) বিলুপ্ত হবে। বিপিপিএর ১৭ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। তবে সরকার চাইলে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে বা কমাতে পারবে। পরিকল্পনামন্ত্রী হবেন এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। আর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কাউকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে সরকার। এই কর্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকবে। বিপিপিএ তার কাজ সম্পাদনের জন্য যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী সদস্যদের সমালোচনার জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী আরেও বলেন, ‘দুর্নীতি বেড়েছে, এ বিষয়ে সংসদ সদস্যরা সবাই একমত, আমিও তাদের সঙ্গে একমত। সারাদেশের অনেকক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে। তুলনা বলতে আনুপাতিক হারে। যে পরিমাণ পাবলিক মানি ৩০-৪০ বছর আগে ব্যয় হত, তার তুলনায় ২/৩/৪ গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে সুযোগ-সুবিধা, চুরির সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে আমি বলব। এটা জাতীয় সমস্যা। আইন-কানুন পাশ করে, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনমত তৈরি করে, জনগণের কাছে স্বচ্ছতা তুলে ধরে প্রচার করি, নিয়ে যায়, দুর্নীতির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসবে।’
এম এ মান্নান বলেন, হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প তাঁর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পার হয়ে যায়। এগুলোর জন্য এক সময় ক্রয়ে যেতে হয়। অতীতের যে সিপিটিইউ ছিল সেটা বর্তমান সময়ে ভলিউমের সঙ্গে সক্ষমতা দেখাতে পারছে না। তাদের জনবল, যন্ত্রপাতির অভাব, অনেকক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার অভাব। সেই সমস্যার সমাধানে বিলটা আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, কোনো টেন্ডার তিনি সিপিটিইউ ডিজি পাস করতে পারেন না। কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই করে ফাইনালে (চূড়ান্ত) যায়। এরপরও যদি সংশয়বোধ থাকে, সেই ভূতে ভয় না পেয়ে একটানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
এর আগে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এখন টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের কোনো লাভ হয়নি। এক শ্রেণির আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ বর্তমান টেন্ডারব্যবস্থাকে নিরাপদ মনে করেন এবং এর আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছেন। এর অসংখ্য উদাহরণ আছে। যেমন পর্দা কেনা ও বালিশ কেনা ইত্যাদি।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, এ আইনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল টেন্ডারবাজি বন্ধ করা। এতে কিছু ভাল হয়েছে। কিছু খারাপও হয়েছে। আগে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ দুর্নীতি হত। আর এখন ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ কাজ হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ দুর্নীতি হয়।
মন্ত্রণালয়ের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আটকে দেওয়ার ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, মেগা প্রকল্প ওনার (পরিকল্পনা মন্ত্রী) কাছ থেকে যায়, তখন তিনি যদি আটকাতে পারতেন তাহলে দেশের অর্থনীতি, আমাদের কাছে অনেক টাকা থাকত। অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আসছে কিন্তু তা থেকে রিটার্ন আসছে না। এটা বোঝার মত সক্ষমতা নেই, এটা আমি বিশ্বাস করি না। অবশ্যই আছে। ক্ষমতার অতিমাত্রায় এক কেন্দ্রীকরণের একজন জ্ঞানী মন্ত্রীও যদি আটকাতে চান তাহলে সেই ক্ষমতা তার কাছে নেই। কারণ সাপোটিং ইনস্টিটিউশন নেই। সেটা করতে হবে। আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। ব্যাংক প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে। ডলার খোলাবাজারে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে এটা এখানে বলব না, বাজারে প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেডি
