দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জবাব দিতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে আরও ১৬ দিন সময় দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আগামী ২৩ জুন তাকে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগের নোটিশ অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দেওয়ার কথা ছিল বেনজীর আহমেদের। তিনি বুধবার ১৬ দিনের সময় চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে কমিশনে আবেদন করেছেন। অনানুষ্ঠানিক একাধিক সূত্রে এই খবর জানা গেছে।
দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, বেনজীর আহমেদ ১৫ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেছেন– এই বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এই আবেদনটি মূলত অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের কাছে থাকে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা আবেদন দেখে সন্তুষ্ট হলে ১৫ দিনের সময় মঞ্জুর করতে পারেন। ১৫ দিন পর্যন্ত সময় চাওয়ার ব্যাপারে দুদক আইনে বলা আছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা এই কার্যক্রমটি পুরোপুরি স্বাধীনভাবে পরিচালনা করে থাকেন। এই বিষয়টি কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত নয়।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য জনসমক্ষে আসার পর তিনি স্বপরিবারে সিঙ্গাপুর চলে গেছেন ৪ মে। তার ও তার পরিবারের সদস্যদের তলবী নোটিশ পাঠানো হয় ২৮ মে। নোটিশের পর আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চেয়ে আবেদন করতে হলে সেই আইনজীবীকে আইনি প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা প্রদান করতে হয়। তলবী নোটিশের আগে এই ক্ষমতা দেওয়ার সুযোগ নেই। বিদেশে চলে যাওয়ার পর দুদকের জারি করা তলবী নোটিশের বিপরীতে সময় চাওয়ার জন্য বেনজীর তার আইনজীবীকে আবেদন করার ক্ষমতা কীভাবে প্রদান করলেন– এ নিয়ে ধূম্রজাল সৃস্টি হয়েছে। এই সময়ে তার আইনজীবী বেনজীর যে দেশে অবস্থান করছেন সেই দেশে গিয়ে বেনজীরের স্বাক্ষরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে দেশে ফিরে আইনজীবী সময় চেয়ে আবেন করতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে বেনজীরের কোনো আইনজীবী সিঙ্গাপুরে বেনজীরের কাছে গিয়েছেন কিনা– এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ দিনের সময় মঞ্জুর করার পর জিজ্ঞাসাবাদের পরবর্তী তারিখে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের অবশ্যই দুদকে হাজির হতে হবে। ওই সময় হাজির না হলে অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্য নেই বলে ধরে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের পরবর্তী কার্যক্রম চলবে।
দুদক আইন অনুযায়ী, এরপর বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব চেয়ে তাদের ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হবে। তাদের ঠিকানায় কাউকে না পাওয়া গেলে ভবনের ওয়ালে নোটিশ টানিয়ে জারি করা হবে। তারা সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। এসব ক্ষেত্রে তারা কার্যকর ভূমিকা না রাখলে আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। পরে মামলা তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওযা হবে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে– ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে গত ২২ এপ্রিল জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর গত ৩ মে পর্যন্ত তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশেই ছিলেন। বেনজীর আহমেদ স্বপরিবারে সিঙ্গাপুর চলে যান গত ৪ মে। এই সময়ের মধ্যে দুদক বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন পেশ করা হলে এবং আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে গত ৪ মে তারা বিদেশ যেতে পারতেন না।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক গত ২৮ মে বেনজীর আহমেদ তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবি নোটিশ পাঠায় দুদক। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক বিশেষ অনুসন্ধান টিমের প্রধান মো. হাফিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত তলবি নোটিশগুলো আলাদাভাবে তাদের গুলশানের বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। বেনজীরকে আজ বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সকাল ১০টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। আগামী ৯ জুন বেনজীরের স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে তাদের বিরুদ্ধে সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বিস্তারিত তদন্ত করেছে। এরপরই গণমাধ্যমে তাদের অস্বাভাবিক সম্পদের খবর প্রকাশ পায়। সূত্র জানায়, গত ২৩ ও ২৬ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৩৩ কোটি টাকার বেশী সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৩টি দলিলে ৬২১ বিঘা জমি, গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দ ও ৩৮টি ব্যাংক হিসাব ও তাদের মালিকানার কোম্পানি অবরুদ্ধ করা হয়। শিগগির তাদের নামে থাকা আরও কিছু সম্পদ জব্দ করা হবে বলে জানা গেছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ