প্রাণিজ পুষ্টির উৎস হলো দুধ, ডিম, মাংস। ২০১৭ সালে আমাদের দেশ মাংশে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০২০ সালে ডিমে সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা(FAO)’র Recommendation অনুসারে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন ২৫০ মিলি দুধ পান করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে জনপ্রতি দুধ পাই ২১০ মিলি। জনপ্রতি ৪০ মিলি দুধের ঘাটতি রয়েছে। দুধের ঘাটতি পূরণসহ প্রাণি সম্পদ খাত উন্নয়নের জন্য সরকার প্রাণিসম্পদ ও ডেয়রী উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রাণিসম্পদ খাতে বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের প্রথম ফেজে অর্থ সহায়তা করেছে ৪ হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা। আর পাইপ লাইনে আছে আরো ৫’শ কোটি টাকা।
আধুনিক প্রযুক্তিতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করণের জন্য সরকার এলডিডিপি(২) ও এমভিসি (৩) নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পেটির সুফল হিসেবে বাংলাদেশ এখন কোরবানিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোরবানীর জন্য এখন আর আমাদের ভারতের গরুর উপর নির্ভরশীল হতে হয়না।
দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ ফজলুল করিম খুলনা গেজেটকে বলেন, খাদ্য তথা প্রাণিজ আমিষে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন প্রাণিজ আমিষ রপ্তানির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের আরও নজর দিতে হবে খাদ্য নিরাপত্তা ও অধিক নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রাণিসম্পদ সেক্টরে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদে সরকার প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে। এর সুফল হিসেবে আমরা গাভীর কনসেপশন রেট বৃদ্ধির জন্য ডিজিটাল এআই গান ব্যবহার করতে পারছি। গবাধী পশুর জন্য কনসেন্ট্রেট এন্ড রাফেজ দুই ধরনের খাদ্যের প্রয়োজন হয। দুটো খাদ্যকে একত্রে করার যন্ত্রের নাম TMR (টোটাল মিক্সড রেশন)। TMR সম্মিলিত অত্যাধুনিক ফ্যাক্টরি সাভার ডেইরি ফার্মে স্থাপন করা হয়েছে। প্রাণীরা কথা বলতে পারেনা। তাই তাদের রোগ নির্ণয়ের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন সরবরাহ করেছে সরকার।
এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৫ হাজার ৫’শ টি ফার্মার্স ফিল্ড স্কুল স্থাপিত হয়েছে। এতে করে খামারীদের প্রশিক্ষণের জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের আসতে হয় না। তাদের স্থাপিত স্কুলে গিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে আসি। সরকার বৈশ্বিক মহামারী করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের ৭’শ কোটি টাকা প্রণোদনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, খামারী ও উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধকরণে “স্মার্ট লাইভস্টক, স্মার্ট বাংলাদেশ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সমগ্র বাংলাদেশের ৪৬৬ টি উপজেলা প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর আয়োজন চলছে।
প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলোঃ
প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা। ক্ষুদ্র খামারী ও উদ্যোক্তাদের প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলায় সক্ষমতা সৃষ্টি করা। বিজ্ঞানভিত্তিক গবাধীপশু লালন পালনের কৌশল অবহিত করা। সর্বোপরি জনসাধারণের জন্য নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ নিশ্চত করা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ ফজলুল করিম বলেন, শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে সপ্তাহব্যাপী উপজেলা পরিষদ মাঠ প্রাঙ্গনে আমরা দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি কর্তৃক প্রাণী সম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৩ শুরু করেছি।
প্রদর্শনীতে বিভিন্ন কোম্পানীর স্টল, গরু, ছাগল, কবুতর, টার্কি, গারল, পোষাপ্রাণীসহ অর্গানিক উপায়ে তৈরী দুগ্ধজাত পণ্য তৈরীর সেফ ফুড এবং আল- বাকারাহ সুইটস ‘র স্টল বসেছে।