কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে তিস্তা নদী ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ বুধবার সকাল ৯টায় পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। দুধকুমার নদের পানি বেড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার চর লুচনী ও টেপারকুঠি এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় তীব্র স্রোতের তোড়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের চরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহে ভাঙনে কয়েকটি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাঠে ঠাঁই নিয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা, রসুলপুর মাদ্রাসা ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুটি সোলার পাম্পসহ দুই শতাধিক পরিবার।
চরের বাসিন্দা মো. হাবিবুর রহমান জানান, দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে এক সপ্তাহে প্রায় ১০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। উজানের ঢল ও তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙন অব্যাহত আছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে খুব দ্রুত প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা ও রসুলপুর মাদ্রাসা, বরেন্দ্রের পানি সেচের দুটি সোলার পাম্পসহ শতাধিক পরিবার ভাঙনের শিকার হবে।
কুড়িগ্রাম বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, গত বছর বরেন্দ্রের ভূ-উপরিস্থ সেচ প্রকল্পের সোলার পাম্প দুটি দুধকুমার নদের ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছিল। তাঁরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) সেচ পাম্প দুটি রক্ষার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বছরও সেচ পাম্প দুটি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ উপজেলার চর লুচনী, আনন্দবাজার, টেপারকুঠি, বিষ্ণুপুর গ্রাম, আনন্দবাজার, বন্ধুবাজার ও কালিগঞ্জ ইউনিয়নের ঢেপঢেপি, কৃষ্ণপুর, নামাপাড়া, নুনখাওয়া ইউনিয়নের কাঠগিরিরচর ও ফকিরপাড়া গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা বুড়িরহাট স্পার বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকির মুখে।
কুড়িগ্রামের পাউবোর তথ্যমতে, দুধকুমার নদের পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ও কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধারের জন্য চারটি স্পিডবোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যার্তদের জন্য ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা এবং ২৫১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম