খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ পৌষ, ১৪৩১ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৪
  বগুড়ায় ট্রাকচাপায় বাবা-মেয়েসহ নিহত ৩
  আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে : আসিফ নজরুল

দুদকের তদন্ত : সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ

গেজেট ডেস্ক

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকসহ (এসবিএসি) দেশের কয়েকটি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন সাউথ বাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় গত ৩০ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি দেশে আমজাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ পেয়ে তা জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুদক। দেশেও জব্দ রয়েছে তার প্রায় এক হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসবিএসি) প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ‘লকপুর গ্রুপ’র চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন। চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে তিনি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকেই ঋণ নেন ২৬৩ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি অন্যান্য ব্যাংক থেকে সব মিলিয়ে ঋণ নেন প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুদকে আসা তথ্য বলছে, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন তিনি।

গত ৩০ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান। পাচার করা অর্থ নিয়েও দুদক অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এস. এম. আমজাদ হোসেন নিজের স্বার্থে জালিয়াতির মাধ্যমে তার কর্মচারীদের নামে ২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেনর।

ব্যাংকটির বিজনেস ডেলিগেশন অনুযায়ী, শাখার কর্মকর্তাদের এসওডি ঋণ মঞ্জুর করার ক্ষমতা না থাকলেও প্রতিটি এসওডি ঋণের অনুমোদন তৎকালীন ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার ও শাখার সেকেন্ড অফিসারের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে জাল কাগজে আরও প্রায় ৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনসহ প্রায় ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চার্জশিট দেওয়া হয়। এছাড়া তার নামে দেশের ডাচ বাংলা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইউসিবিএল, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক-সহ ১৩টি ব্যাংকে থাকা প্রায় এক হাজার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। আমজাদ বর্তমানে বিদেশে পালিয়ে আছেন।

দুদকের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এস এম আমজাদ হোসেনের আমেরিকা, কানাডা, দুবাই ও ভারতে বাড়ি রয়েছে। ভারতের কলকাতায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ কয়েকশ বিঘা চিংড়ী চাষের ঘের রয়েছে। সেখানে চিংড়ি চাষ করে আমেরিকায় রফতানি করেন। আমজাদ হোসেন, তার স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ, মেয়ে তাজরি ও তাদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির নামে আমেরিকা, কানাডা, দুবাই ও ভারতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংক হিসাব, কোম্পানির হিসাব বা এফডিআর থাকলে সেগুলো ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করে দুদককে তথ্য দিতে বিএফআইইউ’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার জহুরুল হুদা বলেন, ‘এস এম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে যেসব অভিযোগ ছিল, তা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুদক আদালতে চার্জশিট দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দুটি মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে। তদন্তকালে সরকারি-বেসরকারি ১৩টি ব্যাংকে আমজাদ ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রায় এক হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে আমেরিকা, কানাডা, দুবাই এবং ভারতে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে আমেরিকা ও কানাডায় তার বাড়ি ছাড়াও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছে দুদক। তার এসব সম্পদ জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ’কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

জহুরুল হুদা আরও বলেন, ‘বিদেশে পাচার হওয়া টাকা বাংলাদেশের মতো যখন-তখন জব্দ করা যায় না। যখন-তখন উদ্ধারও করতে পারি না। বিভিন্ন প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়াগুলো চলমান আছে।’ তবে এখনও পর্যন্ত পাচার করা কোনও টাকা উদ্ধার করতে না পারলেও দুদকের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।

দুদকের দায়ের করা মামলায় আসামিরা হলেন— ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এস. এম আমজাদ হোসেন, ব্যাংকটির পরিচালক ক্যাপ্টেন এম. মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মতিঝিল শাখার কর্মকর্তা শেখ শরফুদ্দিন, প্রধান শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার ইশতিয়াক আহমেদ, বনানী শাখার ফার্স্ট এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রুমন-উল-ইসলাম, বিজয় নগর শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার তানজির উদ্দিন চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং ব্যাংকের নরসিংদীর মাধবদী শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা তাসরিমা নাহিদ এবং রাফি-মাহি করপোরেশনের মালিক এ. কে. এম আসিফ উদ্দিন। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন 

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!