খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে
সাতক্ষীরার বাজারে আমের সরবরাহ বেড়েছে

দাম না পাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন আমচাষী ও ব্যবসায়িরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় আম পঞ্জিকা পরিবর্তন করে সংগ্রহের তারিখ এগিয়ে আনায় শুরুতেই বাজারে আমের সরবরাহ গত বারের তুলনায় বেড়েছে কয়েক গুন। ফলে জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে আম পাড়ার তৃতীয় দিনেই দাম নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষী ও ব্যবসায়িরা।

রেবাবার (৭ মে) বাজারে সব ধরনের আমের দাম ছিল গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। পাইকারি বাজারে আমের এই দাম অব্যহত থাকলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন আমচাষী ও ব্যবসায়িরা।

মৌসুমের শুরুতেই আমের দাম কম থাকার কারণ হিসাবে সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজারের আড়তদাররা জানান, জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ঘোষিত আম পঞ্জিকা অনুযায়ি গোবন্দিভোগ, বোম্বাই ও গোলাপখাস সহ স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহের দিন ছিল ১২ মে। যে কারণে চাষীরা বাগানের আম পাড়তে পারেনি। কিন্তু হঠাৎ করে ওই তারিখ এগিয়ে ৫ মে করায় প্রথম দিনেই বাজারে আমের সরবরাহ বেড়ে গেছে। যে কারণে শহরের সুলতানপুর বড় বাজারের আড়তগুলোয় তিলধারণের ঠাঁই নেই। ফলে হঠাৎ করে সরবরাহ বেশি হওয়ার কারণেই আমের দরপতন হয়েছে।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নগরঘাটা গ্রামের আম ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম দাম বেশি পাওয়ার আসায় গতকাল মৌসুমের প্রথম দিন আড়তে ৬০ মণ আম নিয়ে আসেন। কিন্তু জেলার সবচেয়ে বড় মোকাম সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে এসেই হতাশ হয়েছেন আমের দাম দেখে। গত মৌসুমের প্রথম দিকে এই বড়বাজারের আড়তে গোবিন্দভোগ আম বিক্রি করেছিলেন মণ প্রতি ২ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দরে। গতকাল একই বাজারে গোবিন্দভোগ বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে। বোম্বাই ও গোলাপখাস আমও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি করেছেন।

নুরুল ইসলাম আরও বলেন, বাগান ক্রয়, পরিচর্যা, শ্রমিক ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মণ গোবিন্দভোগ আম উৎপাদন খরচ পড়েছে কমপক্ষে ২ হাজার টাকার উপরে। সেখানে বাজারে প্রতি মণ আম বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার থেকে ১৮ শ’টাকা দরে। ফলে বাজারে এমন দাম গেলে আটটি বাগানে তার কয়েক লক্ষ টাকা লোকসান হবে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কুখরালী গ্রামের আম ব্যবসায়ী ফজর আলী খোকা জানান, গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি মৌসুমে তার আমবাগানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে ১৫-১৬টি আমবাগান ক্রয় করেছেন। শুক্রবার তিনি মৌসুমের প্রথম আম বিক্রি করতে আসেন সুলতানপুর বড় বাজারে। কিন্তু বাজারে আমের দাম শুনে মাথাঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল তার। যে গোবিন্দভোগ গত মৌসুমে আড়াই হাজার টাকার বেশি বিক্রি করেছেন তা গতকাল বিক্রি করেছি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে। বাজারের আড়তগুলোতে আমের সরবরাহ বাড়লে দাম আরো কমবে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা বড়বাজারের আম বিক্রিকারক আড়তদার মেসার্স মর্জিনা ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম জানান, বাজারের সব আড়তে আমে সয়লাব হয়ে গেছে। কোনো আড়তে তিলধারণের ঠাঁই নেই। একদিনেই কয়েক হাজার মণ আম উঠেছে সুলতানপুর বড় বাজারের আড়তে। যে কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষী বা ব্যবসায়িরা। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় সব ধরনের আম গত দুই দিনে অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে আড়তগুলোয়।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার জেলায় চার হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। আম বাগান রয়েছে ৫ হাজার ২৯৯টি। আম চাষীর সংখ্যা ১৩ হাজার ১০০ জন। সাতক্ষীরার সংশোধিত আম পঞ্জিকা অনুযায়ি শুক্রবার (৫মে) প্রথম দফায় গোবিন্দ ভোগ, গোপাল ভোগ, সরাই খাস, গোলাপ খাসসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু করা হয়েছে। হিমসাগরের জন্য ১০ মে, ল্যাংড়ার জন্য ১৮ মে , আ¤্রপালি ২৮ মে দিন ধার্য করা হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রি করা যাবে।

তিনি আরো বলেন, জেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস, বোম্বাই, তোতা, আ¤্রপালি ও ফজলিসহ অন্তত ১৫-১৬ জাতের আম উৎপাদন হয়, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। এবার আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে যাবে আশা করা যচ্ছে।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!