প্রায় এক যুগ ধরে বন্ধ খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত বন্ধ মিলের যন্ত্রাংশ পাহারা দিয়েছে পুলিশ। এরপর অজ্ঞাত কারণে পুলিশ পাহারা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে শুরু হয় লুটপাটের মহোৎসব।
বন্ধ কারখানা ভবনের ভেতরে শতাধিক মোটর, ৫টি অটো মেশিন, ফ্যান, ম্যানুয়াল মেশিন ছিল। এখন এর কিছুই অবশিষ্ট নেই। লুটের পর রীতিমত পিকআপ ভাড়া করে মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লুটপাটের সঙ্গে স্থানীয় উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা জড়িত থাকায় প্রতিবাদের সাহস পায়নি স্থানীয়রা।
সম্প্রতি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে ভুতুড়ে পরিবেশ। পরিষ্কারের অভাবে আগাছায় ভরে আছে পুরো এলাকা। কারখানার গুদাম ঘর, মেশিন রাখার কক্ষ পুরো ফাঁকা। কোনো মালামালই আর অবশিষ্ট নেই। কারখানায় কোনো নিরাপত্তা প্রহীর দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, রূপসা বাজার চর ও রূপসা ট্রাফিক মোড় এলাকার একদল কিশোর কারখানার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা নানা অপরাধে জড়িত। এক সময় রাতে ট্রাক বোঝাই করে মালামাল নিতো তারা। স্টাফ কোয়ার্টারের কর্মচারীরা বাধা দিলে তাদের পিস্তল, রামদা, দায়ের সামনে জিম্মি করে লুট করতো। এখন আর ভয়ে কেউ বাধা দেয় না। তাই দিনদুপুরে কারখানায় ঢুকে মালামাল নিয়ে যায় চক্রটি।
মিলের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫৬ সালে গেওয়া কাঠের ওপর নির্ভর করে খুলনার রূপসা নদীর তীরে ১৮ একর জমির ওপর দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির যাত্রা শুরু হয়। মিলটি মালিকানায় ছিল পাকিস্তানি মালিকানাধীন দাদা গ্রুপ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে মিলটি জাতীয়করণ করে চালু করে সরকার। ১৯৯৩ সালে ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এ মিলের ৭০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। কিন্তু লোকসানের কারণে ২০১০ সালে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তারা। ২০১১ সালে সরকারি তত্ত্বাবধানে কারখানার মালামাল বুঝে নেওয়া হয়। সেই সময় থেকে মালামাল সংরক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনকে।
ভাইয়া গ্রুপের পক্ষে কারখানা দেখভালের দায়িত্বে আছেন নুরুল হক নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, কারখানার বেশিরভাগ মালামালই লুট হয়ে গেছে। আশপাশের সবাই বিষয়টি জানে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না।
তিনি জানান, মিলের মটর, ফ্যান, বিদ্যুৎ সংযোগের প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের তার লুট হয়েছে। কারখানায় ৫ শতাধিক ফ্যান ছিল। সেগুলোও নিয়ে গেছে। আমরা এসব বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়, স্থানীয় পুলিশ, জেলা প্রশাসনের দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে গত কয়েক বছরে শতাধিক অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মালামাল চুরির বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।