ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে মেহমান ও মেযবানের কিছু আদব রয়েছে। যেগুলি মেনে চলছে দাওয়াত বা মেহমানদারিতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকেনা। তাহলে চলুন সে সকল আদবগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
১. উপস্থিতির ক্ষেত্রে দাওয়াত দাতাকে দীর্ঘ অপেক্ষায় না রাখা, যা তাদেরকে বিরক্ত ও অস্থির করে তুলে; আবার প্রস্তুতির পূর্বেই উপস্থিতিকে তরান্বিত না করা, যার ফলে তারা হতবিহব্বল হয়ে পড়ে; কেননা, এমন কর্মকাণ্ড তাদের কষ্টের কারণ।
২. যখন প্রবেশ করবে, তখন মাজলিসের সামনে চলাফেরা করবে না, বরং মাজলিসের মধ্যে বিনয়ী হয়ে চলবে; যখন কোনো জায়গায় বসার জন্য ইঙ্গিত করবে, তখন সেখানে বসে পড়বে।
৩. মেহমানের জন্য দ্রুত খাবার পরিবেশন করা; কেননা, দ্রুত খাবার পরিবেশন করার মধ্যে মেহমানকে সম্মান করার বিষয়টি নিহিত রয়েছে; আর রসূলুল্লাহ ﷺ মেহমানকে সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি বলেন:
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৭
৪. সকলে খাবার গ্রহণ শেষ করার পূর্বেই তাদের সামনে থেকে খাবার উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত না হওয়া।
৫. মেহমানকে সাধ্যানুযায়ী মেহমানদারি করা; কেননা, তাতে কমতি করাটা ব্যক্তিত্ব হানি করে এবং বেশি করাটা কৃত্রিমতা ও লৌকিকতার অন্তর্ভুক্ত; আর দু’টি কাজই নিন্দনীয়।
৬. যখন সে মেহমান হিসেবে কারো কাছে অবতরণ করবে, তখন সে যেন তিন দিনের বেশি সেখানে অবস্থান না করে; তবে তার মেযবান বা অতিথি সেবক যদি আরও বেশি দিন থাকার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করে, তাহলে তিন দিনের বেশি থাকাতেও কোনো দোষ নেই। আর যখন সে প্রস্থান করবে, তখন তার প্রস্থানের জন্য মেযবানের কাছে অনুমতি চাইবে।
৭. মেহমানের সাথে বাড়ির বাহির পর্যন্ত গিয়ে তাকে বিদায় জানানো; সালফে সালেহীন তথা পূর্ববর্তী গ্রহণযোগ্য উলামায়ে কেরাম এমন করতেন, তাছাড়া এ কাজটি শরী‘য়ত কর্তৃক নির্দেশিত মেহমানকে সম্মান করার তালিকাভুক্ত একটি কাজ।
৮. মেহমান ভালো মনে বিদায় নিবে, যদিও তার হক আদায়ে কোনো প্রকার ত্রুটি বিচ্যূতি হয়ে থাকে; কেননা, এটা উত্তম চরিত্রের অন্যতম দিক, যার দ্বারা বান্দা রোযা পালনকারী ও নফল নামায আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করবে।
৯. মুসলিম ব্যক্তির ঘরে কমপক্ষে তিনটি বিছানা থাকা ভাল। একটি তার নিজের জন্য, দ্বিতীয়টি তার পরিবারের জন্য এবং তৃতীয়টি মেহমানের জন্য; আর তিনের অধিক বিছানা রাখা উচিত নয়; রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
فِرَاشٌ لِلرَّجُلِ وَفِرَاشٌ لِلْمَرْأَةِ وَفِرَاشٌ لِلضَّيْفِ وَالرَّابِعُ لِلشَّيْطَانِ
একটি বিছানা পুরুষ ব্যক্তির জন্য; আরেকটি বিছানা তার স্ত্রীর জন্য; তৃতীয় বিছানাটি মেহমানের জন্য এবং চতুর্থ শয়তানের জন্য। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪১৪২
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন।
লেখক : ইমাম ও খতিব কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়