সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে নতুন অ্যাপ ‘থ্রেডস’। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের প্যারেন্ট কোম্পানি মেটার নতুন এই অ্যাপটি প্রথম দিনেই পেয়েছে ৩ কোটি ব্যবহারকারী।
তবে এরই মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল প্রতিদ্বন্দ্বী এই অ্যাপের জন্য মেটার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে টুইটার। শুক্রবার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টুইটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাত্রই চালু হওয়া নতুন অ্যাপ ‘থ্রেডস’ শুরুতেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে বড় সাড়া ফেলেছে। প্রথম সাত ঘণ্টার মধ্যেই এই অ্যাপটি ব্যবহারের জন্য এক কোটি ব্যবহারকারী নাম লেখান। আর ১২ ঘণ্টায় সেই সংখ্যা দাঁড়ায় তিন কোটিতে।
মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা এই অ্যাপটিকে টুইটারের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী’ হবে বলে বর্ণনা করেছেন।
তবে টুইটারের প্রধান ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতা ঠিক আছে, প্রতারণা নয়’। অন্যদিকে সাবেক টুইটার কর্মীরা থ্রেডস তৈরি করতে সহায়তা করেছেন বলে একটি আইনি চিঠিতে সামনে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেছে মেটা।
থ্রেডসের চেহারা এবং (এটি চালানোর) অনুভূতি টুইটারের মতোই বলে বিবিসি নিউজের প্রযুক্তি প্রতিবেদক জেমস ক্লেটন উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, মেটার এই নতুন অ্যাপের নিউজ ফিড এবং পুনরায় পোস্ট করার বিষয়টি অবিশ্বাস্যভাবে পরিচিত।
এই পরিস্থিতিতে টুইটার অ্যাটর্নি অ্যালেক্স স্পিরো বুধবার মেটা সিইও মার্ক জুকারবার্গকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি মেটাকে থ্রেডস তৈরি করতে ‘টুইটারের বাণিজ্য গোপনীয়তা এবং অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির নিয়মতান্ত্রিক, ইচ্ছাকৃত এবং বেআইনি অপপ্রয়োগের’ অভিযোগ করেছেন।
নিউজ আউটলেট সেমাফোর এই চিঠি পাঠানোর খবরটি প্রথম রিপোর্ট করেছে।
বিশেষত, ওই চিঠিতে স্পিরো অভিযোগ করেছেন, মেটা কয়েক ডজন সাবেক টুইটার কর্মীকে নিয়োগ করেছিল, যাদের ‘টুইটারের বাণিজ্য গোপনীয়তা এবং অন্যান্য অত্যন্ত গোপনীয় তথ্যগুলোতে প্রবেশাধিকার ছিল’। আর তারাই শেষ পর্যন্ত মেটাকে ‘কপিক্যাট’ থ্রেডস অ্যাপ তৈরি করতে সহায়তা করেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, টুইটার তার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে চায় এবং মেটায় অবিলম্বে টুইটার বাণিজ্য গোপনীয়তা বা অন্যান্য অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য ব্যবহার বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ টুইটার নেবে বলেও দাবি করা হয়েছে।
বিবিসি নিউজ চিঠির একটি অনুলিপি দেখেছে এবং এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মেটা ও টুইটার উভয়ের সাথেই যোগাযোগ করেছে।
ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতা ভালো, প্রতারণা নয়।’
থ্রেডসের বিষয়ে মেটার মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন পোস্ট করেছেন, ‘থ্রেডস ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের কেউই সাবেক টুইটার কর্মী নয়।’
উল্লেখ্য, মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক গত বছরের অক্টোবরে টুইটার কিনে নেওয়ার পর থেকে জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্মটি বেশ কিছু বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পরিবর্তনের কারণে যেসব টুইটার ব্যবহারকারী অসন্তুষ্ট, নতুন অ্যাপ থ্রেডস তাদের আকৃষ্ট করতে পারে।
এছাড়া থ্রেডসের অনেক বৈশিষ্ট্য টুইটারের মতোই। যেমন কোনো পোস্ট ৫০০ বর্ণের বেশি হতে পারবে না বলে থ্রেডসে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে।
তবে থ্রেডস যে পরিমাণে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করবে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মগুলো তার সমালোচনা করেছে। অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, থ্রেডস ডাউনলোড করলে এটি ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্য, আর্থিক এবং ব্রাউজিং সংক্রান্ত তথ্যসহ অনেক ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবে।
বিশ্বের একশোটির বেশি দেশে এখন থ্রেডস ব্যবহার করা যাবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এখনও এটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। মূলত কিভাবে এই অ্যাপটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে সে সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে এখনও দেওয়া হয়নি সেই অনুমতি।
খুলনা গেজেট/এনএম