থাইল্যান্ডের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন আজ। এদিন ৯ বছরের সেনা ও সেনাসমর্থিত সরকারের অবসান ঘটিয়ে নতুন একজন বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন পার্লামেন্টের এমপিরা। সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসনে বসা প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচা এরই মধ্যে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে ফ্রান্স ২৪।
দেশটির সবচেয়ে বেশি সংস্কারবাদী দল মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি ১৪ই মের নির্বাচনে পপুলার ভোটে বিজয়ী হয়। একই সঙ্গে প্রতিনিধি পরিষদে সবচেয়ে বেশি আসন পায়। নিয়ম অনুযায়ী এই দল থেকেই নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। কিন্তু দেশটির সিনেটে ২৫০টি আসন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। তাদের কারণে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির ৪২ বছর বয়সী নেতা, ব্যবসায়ী পিটা লিমজারোয়েনরাতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খায়েশ পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে এক আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদের ৫০০ আসনে তার দল ১৫১ আসন পেয়ে বিজয়ী হয়েছে।
ফলে তাকে সরকার গঠন করার জন্য জোট গঠন করতে হচ্ছে। আটটি দলকে নিয়ে জোট করেছেন। তাদের সব আসন মিলে তার আসন সংখ্যা হয়েছে ৩১২। একে স্বাস্থ্যবান এক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থিতিনান পংসুধিরাক বলেছেন, বিজয়ী দলের জোট এটা। অন্য দেশগুলোতে এমন হলে তারাই তো ক্ষমতায় যায়।
কিন্তু পিটা লিমজারোয়েনরাতের সামনে বেশ কয়েকটি বাধা আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিনিধি পরিষদ ও ২৫০ আসনের সিনেটে যৌথ ভোট। ২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পরে যে সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের আশীর্বাদপুষ্ট সিনেটের এসব সদস্য। ফলে তাদের পক্ষ থেকে তার ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সব মিলে পিটা বা অন্য কোনো প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী হতে হলে যৌথ অধিবেশনে কমপক্ষে ৩৭৬ ভোট পেতে হবে। পিটার দলের সঙ্গে এসব সিনেটরের মতের বড় ব্যবধান আছে। কারণ, পিটা ও তার দল মুভ ফরোয়ার্ড রাজতন্ত্রের সংস্কার করতে চান। রাজপরিবারের সমালোচনা করলে বা তাদের অবমাননা করলে বর্তমান আইনে কোনো ব্যক্তির তিন থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান আছে। তিনি সেই আইনও সংস্কার করতে চেয়েছেন। এ অবস্থায় পরিস্থিতি কোনদিকে যায় বলা কঠিন।
এক্ষেত্রে থিতিনান পংসুধিরাক বলেন, মুভ ফরোয়ার্ড নির্বাচনে প্রথম হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ফিউ থাই পার্টি। জোটের শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দলের জোট ব্যাপক ভোট পেয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণের চাপ সিনেটরদের ওপর পড়তে পারে। ফলে তারা কেউ কেউ পিটাকে ভোট দিতে পারেন। তবে তা নির্ভর করে ইচ্ছার ওপর, রাজপরিবারভিত্তিক রক্ষণশীলতার ওপরে। যদি এসব সিনেটরের মন জয় করতে না পারেন, তাহলে পিটাকে শূন্য হাতে ফিরতে হবে। এক্ষেত্রে যদি জোটের সঙ্গী ফিউ থাই পার্টি তাদের কোনো প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী পদে দাঁড় করায়, তাহলে তার জয়ের বিষয়টিও অচিন্তনীয় হয়ে উঠবে। কারণ, রাজতন্ত্রপন্থি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর এক নম্বর শত্রু তারা। এই দলটির নিবিড় সম্পর্ক আছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে। তার সরকারের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায় সেনারা।
খুলনা গেজেট/এনএম