কুমিল্লায় বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা আটকা পড়েন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম ও র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান।
রোববার বিকেলে কুমিল্লা জিলা স্কুল মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা স্কুলের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিলে তাদের নিরাপত্তা ও প্রটোকলে থাকা অন্তত ১২টি গাড়ি আটকা পড়ে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আইজিপি হেলিকপ্টারে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে কুমিল্লা শহরের ঈদগাহ মাঠে নামেন। সেখান থেকে জিলা স্কুলে এসে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করে গাড়িতে ফেরার পথে স্কুলের ফটকের অদূরে তাঁকে আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ত্রাণ বিতরণের প্রক্রিয়া নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে স্কুলের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় না গিয়ে তিনি (আইজিপি) কেন শহরে ত্রাণ বিতরণ করলেন? শহরে কেউ তো বন্যাকবলিত হয়নি। এখানে নগরীর দক্ষিণ চর্থা, ধর্মপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ লোকজন টেনে এনেছে। এ সময় এক শিক্ষার্থী আইজিপির গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইকে বলতে থাকেন, আমাদের জানানো হয়েছিল, আইজিপি জিলা স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। কিন্তু তিনি এভাবে গাড়িবহর ও গণমাধ্যম নিয়ে মাঠে কেন এলেন? স্কুল মাঠ কি পুলিশের? গত তিন দিন ধরে এখানে বন্যাদুর্গতদের জন্য আমরা কাজ করছি। আশ্রয় নেওয়া শিশুরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, পুলিশের কেউ তো খবরও নেয়নি, এখন কেন তারা এসেছে?
ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আইজিপির কাছে ত্রাণ সরবরাহের জন্য গাড়ি, লাইফ জ্যাকেটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দাবি করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণ সরবরাহের জন্য পুলিশের একটি পিকআপভ্যান দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা ফটক খুলে দিলে আইজিপি ও র্যাব ডিজির গাড়িবহর বের হয়ে সার্কিট হাউসে চলে যায়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন বলেন, এটা নিছক ভুল বোঝাবুঝি। ত্রাণ বিতরণের জন্য শিক্ষার্থীরা কিছু সহায়তা চান। তাদের সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
নতুন চিন্তা-চেতনায় পুলিশ গড়ে তোলা হবে : আইজিপি
পরে কুমিল্লা সার্কিট হাউসে আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, একটি বিয়োগান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের বিশাল অর্জন হয়েছে। ছাত্র-জনতার পাশাপাশি পুলিশের অনেক সদস্য শহীদ হয়েছেন। তাদের রক্তে আমাদের এ স্বাধীনতা ও নতুন করে মুক্তি আস্বাদন করতে পারছি। সে জায়গা থেকে আমরা নতুন চিন্তা-চেতনায় পুলিশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু। সেটির জন্য সব অন্তরায় দূর করা হবে। অতীতে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। দল-মত নির্বিশেষে পুলিশ যেন প্রকৃত অর্থে সেবাপ্রত্যাশী ও অসহায়দের চাহিদা পূরণ করতে পারে, আমরা সে চেষ্টা করছি। এ জন্য কমিউনিটি অ্যানগেজমেন্ট করতে চাই। পুলিশে ছাত্র-তারুণ্যের শক্তি যোগ করতে চাই।
আইজিপি বলেন, এখন সরকারের অগ্রাধিকার বন্যা। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। তবে কোথাও কোথাও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটি জায়গায় দুর্গতদের সমান সহায়তা দিতে। ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম হচ্ছে কিনা– সেদিকেও সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।