খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর উত্তরা থেকে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

তেলের মূল্য বৃদ্ধি : ১৫ দিনে হাতিয়েছে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা

গে‌জেট ডেস্ক

বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের বাড়তি দাম নিয়ে ১৫ দিনে আনুমানিক প্রায় ১০০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এই তথ্য দিয়েছে।

বুধবার(৯ মার্চ) ঢাকায় ভোজ্য তেল মিল মালিক এবং ডিলারদের নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক থেকে বলা হয়েছে, তেলের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহের সংকট সৃষ্টির সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে।

এছাড়াও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টিম আগামিকাল থেকে তেল মিলগুলোতে গিয়ে সয়াবিন তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করবে। একই সাথে মিল মালিকদের দেয়া তিন মাসের সরবরাহের তথ্য ঐ টিম যাচাই করে দেখবে।

দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ হঠাৎ করেই কমে গেছে। এই অভিযোগ তুলে খুচরা এবং পাইকারি বাজারে তেলের বেশি দাম নেয়া হয় দুই সপ্তাহ ধরে।

বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। এমন অভিযোগও উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোজ্য তেল মিল মালিক ও ডিলারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে সফিকুজ্জামান তথ্য দিয়েছেন যে, তেলের বাড়তি দাম নিয়ে গত ১৫ দিনে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, প্রতিদিনের ভোজ্য তেলের চাহিদার সাথে তুলনা করে তারা অনুমানিক এই পরিসংখ্যান পেয়েছেন।

“প্রতিদিন যদি ৫০০০ টন ভোজ্য তেলে চাহিদা থাকে, তাতে লিটারে ১০ টাকা করে বাড়লে মোট অংকটা অনেক বড় হয়। এভাবে আনুমানিক একটা পরিসংখ্যান আমরা দিয়েছি,” বলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

বাজারে এই পরিস্থিতি কারা সৃষ্টি করেছে-তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে ঐ বৈঠকে।

তেলের বাজারে কারসাজিতে জড়িত কারা

তবে কিছু ডিলার এবং অসাধু ব্যবসায়ী মিলে এই সংকট সৃষ্টি করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, “অসাধু চক্র এটা করেছে। কয়েকটা পর্যায় থেকে এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।”

“এরমধ্যে যারা ডিলার, তাদেরও কেউ কেউ এখানে জড়িত। আবার পাইকারি পর্যায়ে জড়িত,” বলছেন তিনি।

“আমরা আগে মিলগুলোর সরবরাহের তথ্য যাচাই করে তারপর সুনির্দিষ্ট ডিলারদের চিহ্নিত করবো। এরপর সরবরাহের তেল কোথায় গেছে-তাও বের করবো।”

মিলগুলোতে সরবরাহ তদারকি করবে সরকারি টিম

মাত্র ছয়টি মিল সয়াবিন তেল এবং পামওয়েলসহ ভোজ্য তেল রিফাইন বা পরিশোধন করে দেশের বাজারে সরবরাহ করে থাকে। এই মিলগুলো বড় বড় শিল্প গ্রুপের প্রতিষ্ঠান।

মিলগুলো থেকে সরবরাহে সংকট তৈরি করা হয়েছে নাকি ডিলারদের কারসাজি – এমন প্রশ্নেও নানা আলোচনা চলছে।

তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেছেন, তাদের বৈঠকে মিল মালিকরা গত তিন মাসের সরবরাহের তথ্য বা তালিকা দিয়েছেন।

“দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। সে অনুযায়ী তিন মাসের চাহিদা এক লাখ ৫০ হাজার টনের মতো। মিল মালিকরা যে তথ্য বা তালিকা আমাদের দিয়েছে, তাতে তারা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের কথা বলেছে,”।

তিনি উল্লেখ করেন, মিল মালিকদের দেয়া এই তথ্য যাচাই করা হবে।

“আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের যৌথ টিম বৃহস্পতিবার থেকে মিলগুলোতে গিয়ে সরবরাহের তথ্য যাচাই করবে।”

তবে প্রাথমিকভাবে কিছু ডিলার বা কিছু পাইকারী বিক্রেতা সরবরাহে সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যে সন্দেহ প্রকাশ করেছে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন একাধিক ডিলার। তবে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি।

সরবরাহে ঘাটতি নেই, দাবি মিল মালিকদের

মিল মালিকদের প্রতিনিধি যারা সরকারের সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে মেঘনা গ্রুপের উপ-উপদেষ্টা মোহাম্মদ শফিউর রহমান বলেছেন, তেল সরবরাহে সংকটের সাথে মিলগুলো জড়িত নয়। “আমাদের সরবরাহ কখনই বন্ধ নাই।”

তবে তিনি বলেছেন, “আমাদের সয়াবিন তেলের একটু সমস্যা হয়েছিল। কারণ তেল নিয়ে একটা জাহাজ একটু দেরিতে এসেছিল।”

“কিন্তু পামওয়েল ভোজ্য তেলে ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে থাকে। এবং আমাদের পাওয়েল সরবরাহ কখনও বন্ধ হয়নি বা কখনও এর সংকট হয়নি। ডিলাররাও সরকারের সাথে বৈঠকে এটা স্বীকার করেছে,” জানান মোহাম্মদ শফিউর রহমান।

তিনি উল্লেখ করেন, তারা গত তিন মাসের তেল সরবরাহের যে তথ্য সরকারকে দিয়েছেন, তা সরকার যাচাই করে দেখবে। তাতে তাদের আপত্তি নেই।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলেছে, সরবরাহের ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ যাচাই করার পর তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে বাজারে সয়াবিনসহ ভোজ্য তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ সারাদেশে যে অভিযান শুরু হয়েছে-তা অব্যাহত থাকবে।

এছাড়া ভোজ্য তেল আমদানিতে শুল্ক কমানোর বিষয়ও সরকার বিবেচনা করছে। সূত্র : বি‌বিসি বাংলা

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!