নগরীর ফুলবাড়িগেট তেলিগাতী কেডিএ সিটি বাইপাস সংযোগ সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ২০১০ সালে নির্মাণ করার পর থেকে অদ্যবধি সড়কটি আর সংস্কার করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের সামনে থেকে তেলিগাতী পাঁকারমাথা হয়ে কেডিএ খুলনা-মংলা হাইওয়ে বাইপাস পর্যন্ত প্রায় সোয়া ১ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং এবং খোয়া উঠে বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট যানবাহন এবং অটোরিকশা চালকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করছে। সড়কে দু’পাশে পানি নিষ্কাশন কিংবা ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে সড়কটির মাঝখানে খানাখন্দে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগের মাত্রা বহুগুণে বেড়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে সড়কটি দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলেও মারাত্মক ভোগান্তি হচ্ছে। সড়কের মাঝখানে বড় বড় গর্তের মধ্যে ইজিবাইক পড়ে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে।
গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, খুলনা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র , খানজাহান আলী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, খুলনা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট , খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খানজাহান আলী টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ, খানাবাড়ি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জনতা ব্যাংক কুয়েট কর্পোরেট শাখা, কুয়েট পোস্ট অফিস, প্রতিভা প্রি ক্যাডেট স্কুল, মিজান একাডেমীসহ বেশ কিছু সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির শত শত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক প্রশিক্ষণার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানগুলির যানবাহন, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ পথচারী চলাচল করে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সড়কটির গুরুত্ব বহুলাংশে বেড়ে যায় এবং যানবাহনের চাপও ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। শহরের ব্যস্ততা এড়াতে পণ্যবাহী ভারী যানবাহন, ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহন এবং যানবাহনগুলো সড়কটি দিয়ে চলাচল করে থাকে।
সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হলে মাঝেমধ্যে যোগীপোল ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সাজ্জাদুর রহমান লিংকন তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে খানাখন্দের ভেতর ইটের আধলা, রাবিশ, খোয়া এবং বালি দিয়ে বন্ধ করে যানবাহন চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করলেও কিছুদিন পর সড়কটি তার পূর্বের চেহারা বেহাল অবস্থায় ফিরে যায়।
জানা যায়, ইতিপূর্বে খুলনা যশোর-মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট থেকে শুরু হওয়া সড়কটির শেষ গন্তব্য ছিলো তেলিগাতী পাঁকারমাথা। ২০১০ সালে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) শহরে যানবাহনের চাপ এড়াতে তেলিগাতী পাঁকারমাথা হতে খুলনা মংলা হাইওয়ে কেডিএ বাইপাস পর্যন্ত সোয়া ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট চওড়া এ সড়কটি নির্মাণ করে। নির্মাণের ১ বছর পর কেডিএ সড়কটি’র রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র কাছে হস্তান্তর করে। নির্মাণের পর থেকে অদ্যবধি সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা এর কোন সংস্কার কাজ হয়নি। দীর্ঘ ১ যুগ সড়কটির কোন সংস্কার কাজ না হওয়ায় এটির বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। সড়কটি দিয়ে পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে এটির পুরো অংশেরই কার্পেটিং এবং খোয়া উঠে গেছে। সড়কের মাঝখানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। প্রাইশঃ দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকদের দুর্ভোগের সাথে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালাতে হচ্ছে।
বর্তমানে সড়কটি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র তত্ত্বাবধানে রয়েছে। দিঘলিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আবু তারেক সাইফুল কামাল খুলনা গেজেটকে বলেন, ২০২১ সালে সড়কটির সংস্কার প্রকল্পের আওতায় একটি প্যাকেজ (চুক্তি) প্রস্তাবনা আকারে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিলো যাতে খরচ ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, ঢাকা এলজিইডির প্রধান কার্যালয় থেকে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনায় খুলনা এলজিইডি দপ্তরকে চিঠি দিয়ে সড়কটির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্যয়বহুল এই সড়কটি সংস্কারের জন্য যে প্যাকেজ প্রস্তাবনা আকারে পাঠানো হয়েছিলো সেটির অর্থের উৎস পাওয়ায় সড়কটির সংস্কার কাজ দ্রুতই শুরু হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম