তৃণমূলের একের পর ভাঙনের খেলায় আপাত চোখে মনে হতে পারে আমাদের রাজ্যে যেন বিজেপি ক্ষমতায় চলে এসেছে। ব্যাপারটা কি এতোই সহজ? তাহলে কি বিজেপি পয়সার জোরে কাগুজে বাঘ? কলকাতা থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত একটি কথা বার বার প্রচারিত হচ্ছে যে, এবার মানুষের পছন্দ বিজেপি। সব দলকে তো দেখা গেল , এবার একবার বিজেপিকে দেখা যাক। “বাঙলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝেনিকো দুর্বৃত্ত” বলে একটা কথা চালু আছে।
যে বাংলার মাটি কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর সহ শ্রমজীবী মানুষের স্বর্গভূমি, যে বাঙলার মাটি ভাষা আন্দোলনের মাটি সেই মাটিতে বিজেপি ক্ষমতায় চলে আসবে — ব্যাপারটা কি এতোই সহজ। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দিল্লিতে কৃষক আন্দোলন বিজেপি সরকারকে যথেষ্টই ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে। বাঙলার মাটিতেও সেই আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে। বলা ভালো পড়তে লেগেছে।
কলকাতায় হান্নান মোল্লার নেতৃত্বে যেভাবে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের মহামিছিল হল তাতে দেখা যাচ্ছে গ্রাম বাংলার কৃষিজমি মানুষ কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কোনোদিনই ভোট দেবেন না। পশ্চিমবঙ্গে পরিযায়ী, সংগঠিত-অসংগঠিত- ক্ষেতমজুর – কৃষি শ্রমিক মিলে এ রাজ্যে শ্রমজীবী ভোটারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটির কাছাকাছি। পরিযায়ী শ্রমিকদের বাস্তব অভিজ্ঞতাতে দেখা গেছে পশ্চিমবঙ্গে আনার ক্ষেত্রে বিজেপি ও তৃণমূলের মনোভাব মোটেই ইতিবাচক ছিল না। তাদের জন্য পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি ব্লকে সব্জি বাজার করে দিয়ে বাম- কংগেস সস্তায় সবজি বা আনাজপাতি তুলে দিচ্ছে ।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় দশ হাজারের কাছাকাছি কমিউনিটি কিচেন সেন্টার করে শ্রমজীবী ও কৃষি শ্রমিককে দুবেলা পেট পুরে খাওয়াচ্ছে কিন্তু বাম-কংগ্রেস । মমতা ব্যানার্জি ২০১১ সালে সংখ্যালঘুদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। সংখ্যালঘুরা এটাও ভাবতে থাকে যে, একটি সেকুলার শক্তি যখন ভাঙনের কবলে পড়ে তখন কিন্তু আরেকটি সেকুলার শক্তিকে আঁকড়ে ধরে। সংখ্যালঘুরা উপলব্ধি করছে, পশ্চিমবঙ্গে বামজমানায় অন্তত মৌলবাদী শক্তি সেভাবে বাড়তে পারেনি। আর পশ্চিমবঙ্গে চাকুরি-বাকরিতে সবচেয়ে ইতিবাচক ভূমিকা দেখিয়েছেন যে মুখ্যমন্ত্রী তার নাম সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় (১৯৭২-৭৭)। বাম ও কংগ্রেসের এই বিষয়টি সংখ্যালঘুদের মনে ঢুকে গেছে। তাই সংখ্যালঘুদের ভোট কিন্তু ক্রমশ জোট-অভিমুখে যাচ্ছে। বাম ও কংগ্রেসের কৃষক সংগঠনগুলি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি ব্লকে কৃষকদের ফসলের সহায়ক মূল্য দিতে কৃষি আধিকারকের কাছে ডেপুটেশন দিচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গে সাড়ে চার হাজার পঞ্চায়েত এলাকায় কৃষি আইন নিয়ে বাম-কংগ্রেস মিছিল কিন্তু সংগঠিত করতে পেরেছে। অধীররঞ্জন চৌধূরী, মহম্মদ সেলিম কিংবা হান্নান মোল্লা বা সুজন-সূর্যকান্তদের সমাবেশে যেভাবে লোকসমাগম হচ্ছে তাতে বিজেপি এই পশ্চিমবঙ্গে অঢেল টাকা ঢাললেও শেষ পর্যন্ত তাকে কাগুজে বাঘ হয়েই থাকতে হতে পারে।
খুলনা গেজেট/কেএম