তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু অংশে এক প্রবল ভূমিকম্পের পর শুধু তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৪৯৮ হয়েছে বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে। অন্যদিকে এএফপি জানিয়েছে, সিরিয়ায় ৮১০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তুরস্ক ও সিরিয়ায় এই ভূমিকম্পে মোট মৃতের সংখ্যা এখন দুই হাজার তিন শরও বেশি। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আড়াই হাজার।
অপরদিকে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কের আজাজ শহরে দুই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছেন। ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল মোহাম্মেদ নুর-আলম সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে আটটার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশের খাহরামানমারাসে ভূমিকম্পে দুই বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন, নূরে আলম ও মো. রিংকু। তারা দুজনই শিক্ষার্থী। তারা যে ভবনে থাকতেন সেটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘ওই অঞ্চলের অনারারি কনসালের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। দুই শিক্ষার্থী সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।’
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আজাজ শহরের পাশাপাশি তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহরে সোমবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ভূমিকম্প। আজমারিন শহরও বাদ যায়নি ভূমিকম্পের আঘাত থেকে।
দুটি দেশেই দুর্গত এলাকাজুড়ে এক বিশাল উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে গ্রাম ও শহরগুলোতে উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপ অনুসন্ধানের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। হাজার হাজার মানুষ এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এপি। তবে এ সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার মানুষ।
এক প্রতিবেদনে বিবিসির জানায়, ভূমিকম্পে উভয় দেশে অনেক ভবন ধসে পড়েছে। এতে অনেকেই আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭মিনিটে তুরস্কের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূম্পিকম্পটি রাজধানী আঙ্কারা ও তুরস্কের অন্যান্য শহরেও অনুভূত হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পুরো অঞ্চল জুড়েই কম্পন অনুভূত হয়েছে। গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার।
সংস্থাটি আরও জানায়, প্রথম ভূমিকম্পের পর আরও কয়েকবার শক্তিশালী কম্পন (আফটার শক) অনুভূত হয়। সবশেষ কম্পনটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এক টুইট বার্তায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা একসঙ্গে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবো। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ইউনিট সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমন সইলু বলেন, ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস। অনেক ভবন ধসে পড়েছে ও অনেক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছেন।
খুলনা গেজেট/ এসজেড