প্রতিকূল পরিবেশ ও তীব্র লবণাক্ততার মধ্যেও রামপালে আমন ধানের আবাদ বেড়েছে। লবণ সহিষ্ণু জাত, উন্নত বীজ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সঠিক বীজ নির্বাচন ও সেচ ব্যবস্থা সহজীকরণ করার ফলে এ উপজেলায় উত্তরোত্তর আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ উপজেলার জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত খাদ্যের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৩৯১ মে. টান।
রামপাল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে মোট আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে, তা বৃদ্ধি পেয়ে আবাদ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে। গৌরম্ভা ইউনিয়নে ৫৭০ হেক্টর। উজলকুড় ইউনিয়নে ৬১০ হেক্টর। বাইনতলা ইউনিয়নে ১ হাজার ৯১ হেক্টর। রামপাল সদর ইউনিয়নে ৯৪০ হেক্টর। রাজনগর ইউনিয়নে ৫১০ হেক্টর। হুড়কা ইউনিয়নে ৭৮৪ হেক্টর। পেড়িখালী ইউনিয়নে ৯৬০ হেক্টর। ভোজপাতিয়া ইউনিয়নে ৫৬৫ হেক্টর। মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নে ১ হাজার ৫০৩ হেক্টর ও বাঁশতলী ইউনিয়নে ৬৮৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
সিংগাড়বুনিয়া গ্রামের কৃষক এম এম মহিতুর রহমান জানান, আবহাওয়া অনুকূল আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হওয়ায় আবাদ খুবই ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে আবাদ ভালো হয়েছে, পোকামাকড় দেখা যায়নি কিন্তু ইঁদুরের উপদ্রব রয়েছে। গাছ কেটে দিচ্ছে।
একই কথা বলেন, বড়দিয়ার কৃষক মন্তাজ মোল্লা। তিনি বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো। পোকায় ধরেনি। এমন থাকলে ভালো ধান পাবো।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী মন্ডল বলেন, বিভিন্ন কারণে এ বছর আমনের আবাদ বেড়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ গুলো হলো, গত আমন মৌসুমে বাম্পার ফলনের কারণে কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছে। সব ইউনিয়নে আবাদ সম্প্রসারণ কারা হয়েছে। প্রণোদনা পুনর্বাসনের মাধ্যমে কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে, এর কৃষককে হাইব্রিড ধানের বীজ দেয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। লবণ সহিষ্ণু জাতের ধান ব্রি-৬৭ ও বিনা ধান ১০ জাত সরবরাহের বৃদ্ধি, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উপর আস্তা বৃদ্ধি, সার, বীজ সঠিক সময়ে সরবরাহ, ন্যায্য মূল্য ও কৃষি যান্ত্রিকিকরণের ফলে আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষক যাতে বেশি করে ফলন বৃদ্ধি করতে পারেন সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছু করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ অর্থ বছরে আমন’র আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর যা গত বছরের চেয়ে ১১০ হেক্টর বেশি। চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৪০ মে. টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১৮ হাজার ১০৫ টন। যা বেড়ে লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৩৫ মে. টানে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশানুরূপ ফলন হতে পারে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, রামপাল উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩৭৪ জন। খাদ্য চাহিদা মোট ৩৪ হাজার ৪৭৯ মে. টন। আর আমন ও বোরো’র উৎপাদন মোট ৩৭ হাজার ৭৭৪ মে. টন। জনসংখ্যার অনুপাতে উদ্বৃত্ত খাদ্যের পরিমাণ ২ হাজার ৩৯১ মে. টান।
খুলনা গেজেট/এনএম