মোংলা ঘোষিয়াখালী চ্যানেলের রামপাল সরকারী কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশ দিয়ে বগুড়া ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে বসতবাড়ি, কৃষিজমি, গাছপালাসহ সেমিপাকা রাস্তা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। রবিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল এসব চিত্র।
মোংলা ঘোষিয়াখালী চ্যানেল খননের পরপরই রামপালের বেশ কিছু এলাকায় তীব্র নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। এর মধ্যে রামপাল সরকারী কলেজের দক্ষিণ পশ্চিম পাশ দিয়ে ওড়া বুনিয়া হয়ে বগুড়া নদীর মোহনা পর্যন্ত তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। এছাড়াও বগুড়া নদীর উত্তর হুড়কার চলাচলের একমাত্র রাস্তার বেশ কিছু অংশ ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। কাকড়াবুনিয়ার একমাত্র চলাচলের রাস্তার প্রায় আধা কিলোমিটার নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও দাউদখালী নদীর ঝনঝনিয়া, ফয়লাহাটের আবাসন এলাকা, শ্রীফলতলা, বড়দিয়া-ইসলামাবাদ সড়কের বেশ কিছু অংশ, পশ্চিম রোমজাইপুর, রোমজাইপুর পূর্ব পাড়া, ডাকরা, রামপাল সদর খেয়াঘাটের দুইপারে তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখে দিয়েছে। মোংলা ঘোষিয়াখালী চ্যানেলসহ দাউদখালী ও বগুড়া নদীর প্রায় ৬/৭ কিলোমিটারজুড়ে এমন ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ফয়লাহাটের যৌখালী ব্রীজের দুইপাশে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় ব্রীজটিও হুমকিতে পড়েছে।
ভাঙ্গনকবলিত এলাকাজুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টি বাড়ী নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়াও ফসলী জমি, গাছপালা, পাকা ও আধাপাকা রাস্তাসহ প্রায় শতাধিক একর ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমি নদী গ্রাস করে নিয়েছে।
বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ড রামপালের ফয়লা বাজার, ঝনঝনিয়া বাজার ও রামপাল সরকারী কলেজের সামনের কিছু স্থানে গেল বছর জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধ করে। অন্যসব জায়গায় ভাঙ্গন অভ্যহত থাকায় জনভোগান্তী চরমে পৌঁছেছে।
ভাঙ্গনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাদের খবর কেউ নেয় না, আমরা পরিবার পরিজন ও শিশুদের নিয়ে চরম ঝুঁকিতে বসবাস করছি। রাত হলে নদী ভাঙ্গনের শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি। দুশ্চিন্তায় ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোথাও জানালেও প্রতিকার মিলছে না।
এ বিষয়ে কথা হয় রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলমের সাথে। তিনি বলেন রামপালের বেশ কিছু এলাকায় বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধ করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু এলাকায় তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে আশু ব্যাবস্হা গ্রহন করবো।
কথা হয় রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান সেখ মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমরা বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালেও তারা কোন ব্যবস্হা নেয়নি। মন্ত্রী মহোদয়ের ডিও লেটার রেডি আছে। তারা নেয় না কেন ?
মুঠোফোনে কথা হয় বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, আমি ভাঙ্গনকবলিত বেশ কিছু স্থান পরিদর্শন করেছি। ৩/৪ টি স্পটে জিও ব্যাগ ফেলে আশু ভাঙ্গন রোধ করা হয়েছে। রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মন্ত্রী মহোদয়ের ডিও লেটারসহ চিঠি পাঠালে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্হা গ্রহন করতে পারবো।
ভাঙ্গন কবলিত স্থানগুলোতে দ্রুত ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী ব্যবস্হা গ্রহণ করা না হলে নদীগর্ভে বিলিন হবে ফসলী জমি, বসতবাড়ি, খেতখামার, কালভার্ট, ব্রীজ ও সড়ক।
খুলনা গেজেট/কেডি