হিমালয় পার্বত্য এলাকায় চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল বা প্রদেশ তিব্বতে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটে গেল, তাতে এ পর্যন্ত ১২৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে আহত অবস্থা উদ্ধার করা হয়েছে আরও ১৮৮ জনকে।
এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য নিশ্চিত করে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল সিনহুয়া বলেছে, দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা এখনও চলছে এবং নিহত-আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৯ টার দিকে ভূমিকম্প আঘাত হানে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকা বলে পরিচিত তিব্বতে। ভূকম্পটির উৎপত্তিস্থল বা এপিসেন্টার ছিল তিব্বতের টিংরি জেলাশহরের ১০ কিলোমিটার গভীরে। এপিসেন্টারটি থেকে হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। টিংরি শহরটি মূলত এভারেস্ট অঞ্চলের উত্তরাঞ্চলীয় প্রবেশ পথ হিসেবে পরিচিত।
প্রথমবার ৬ দশমিক ৮ মাত্রার কম্পন হওয়ার পর কয়েক মিনিট ধরে বেশ কয়েক ডজন ‘আফটার শক’ হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা সংস্থা চায়না আর্থকোয়েক নেটওয়ার্কস সেন্টার। প্রতিটি আফটার শকের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৪ কিংবা তারও কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব গবেষণা সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুসারে, ভূকম্পের প্রথম ধাক্কাটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১।
ভূ-কম্পের মূল আঘাত গিয়েছে তিব্বতের শিগাৎসে অঞ্চলের ওপর দিয়ে। এই অঞ্চলটিতে অন্তত ৮ লাখ মানুষের বাস। ভূমিকম্পের পর রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো শিগাৎসে। নিহত এবং আহতদের অধিকাংশই শিগাৎসের বিভিন্ন এলাকার।
তিব্বতের গড় তাপমাত্রা এখন মাইনাস ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ মঙ্গলবার রাতে এই তাপমাত্রা মাইনাস ১৬ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে বলে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে চীনের আবহাওয়া দপ্তর।
চীনের দুই সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সিনহুয়া এবং সিসিটিভি ভূমিকম্প বিধ্বস্ত বিভিন্ন এলাকার ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছে। অধিকাংশ চিত্রই ধ্বংসস্তূপ থেকে হতাহতদের উদ্ধার, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান এবং কোনোটিতে বাড়িঘর হারানো লোকজনের জন্য তাঁবু নির্মাণ সংক্রান্ত।
চীনের দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা জানিয়েছে, উপদ্রুত এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে ত্রাণ পাঠানো শুরু হয়েছে। এসব ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে তাঁবু, শীতবস্ত্র, খাদ্য, ফোল্ডিং বিছানাসহ প্রায় ২২ হাজার ধরনের সামগ্রী।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক তাৎক্ষণিক ঘোষণায় বলেছেন, নিখোঁজদের সন্ধান এবং উদ্ধারে সর্বাত্মক অভিযান শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে যেন যত শিগগির সম্ভব খাদ্য, তাঁবু ও শীতবস্ত্র সহায়তা দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ততের পূনর্বাসনে সরকার সহায়তা করবে বলেও উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে তিব্বতের পাশাপাশি ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে চীনের দক্ষিনপূর্বাঞ্চল, উত্তর ভারত, নেপাল এবং ভুটানেও। তবে সেসব জায়গায় কেউ নিহত হয়েছেন— এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে নেপালে একজন ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে বাড়ির জানালা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আহত হয়েছেন বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।
সূত্র : রয়টার্স
খুলনা গেজেট/এএজে