খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ কার্তিক, ১৪৩১ | ৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ড. ইউনূসকে প্রধান করে ১০ সদস্যের পরিকল্পনা কমিশন গঠন; প্রজ্ঞাপন জারি
  এলপি গ্যাসের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত বিকেলে

তিন সপ্তাহ খাবার পানি নেই শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, দুর্ভোগে রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে খাবার পানির সরবরাহ নেই সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা ।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সম্প্রতি হাসপাতালের চারটি মোটর চুরি ও একটি বেসরকারি সংস্থা প্রদত্ত পানির প্লান্ট নষ্ট হওয়াতে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে, দ্রুত এই সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে শ্যামনগর উপজেলা সদর। দেশের বৃহত্তম উপজেলা গুলোর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলা একটি। জেলা সদর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় উপকূলীয় এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে থাকেন এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। কিন্তু টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রয়োজনীয় সুপেয় পানি সরবরাহ পাচ্ছেন না রোগী ও তাদের স্বজনরা। পানি সরবরাহ ব্যবস্থা একেবারে বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশপাশের দোকান থেকে কিনে, অথবা অনেক দূর থেকে পায়ে হেঁটে ফিল্টার থেকে ও বাসাবাড়ি থেকে বোতলে বা বালতিতে করে পানি নিয়ে আসছেন রোগীর স্বজনরা। তাদের দাবি, পানি না থাকায় রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক রোগী বলেন, স্যালাইন গুলে খাওয়ার মতো পানিও নেই হাসপাতালে। প্রতিটি কাজের জন্য বাইরে থেকে পানি আনতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে এনজিও’র দেওয়া পানির প্লান্টই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে সেটি তিন সপ্তাহ ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। রোগীরা প্রতিদিন পানি আনার কষ্টের কথা বলাবলি করে। কিন্তু, কেউ সে কথা গায়ে মাখে না। ফলে খাবার পানির সংকটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তার স্বজনদের।

উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের গুমানতলী এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সকিনা খাতুন জানান, হাসপাতালে খাবার পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দোকান থেকে পানি কিনে খেতে হচ্ছে। পানি কিনতে প্রতিদিন ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা চলে যাচ্ছে আমাদের। ফলে প্রয়োজনীয় ঔষধের পাশাপাশি বাইরে থেকে পানি কিনে খাওয়ায় খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।

নিউমোনিয়া আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকা থেকে এসেছেন মর্জিনা খাতুন। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে দুইদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। রাতে খাবার পানির দরকার ছিল। কিন্তু, হাসপাতালের ভেতরে খাবার পানির ব্যবস্থা না থাকায় পানি সংগ্রহ করতে পারিনি। পরে পাশে একজন কাছ থেকে পানি চেয়ে খেয়েছি।

অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল ক্যাম্পাসের চারটি মোটর অনেক আগে চুরি হলেও তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই। মোটর চারটির প্রতিস্থাপনের এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরের পানির প্লান্টটি নষ্ট হওয়ায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া একসাথে চারটি মোটর চুরি হয়ে যাওয়ায় একবারে সবকিছু বিকল হয়ে পড়ে আছে। ভেঙে পড়েছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা।

বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তার সাথে আমার কথা হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। তিনি আমাকে বলেছেন আমি ভিজিট করে দেখে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এখনো করেননি। হয়তো দুই একদিনের মধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিষয়টি দেখা হবে।

শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ লিয়াকত আলী বাবু বলেন, হাসপাতালে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রোগীর স্বজনরা দূরদূরান্ত থেকে পানি এনে পান করছেন। এতে ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে দ্রুত পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!