খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) তিন শিক্ষককে বরখাস্ত ও অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ব্যানারে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে আটজন শিক্ষক সমাবেশ করেন।
এসময় বক্তাদের মধ্যে ড. আব্দুলাহ হারুন চৌধুরী বলেন, বিনা ভোটে নির্বাচিত শিক্ষক সমিতি আজ উপাচার্যকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে ব্যস্ত। সাধারণ শিক্ষকদের ব্যাপারে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তিনি উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি যদি বলে থাকেন সব সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট নিয়ে থাকে তাহলে আমরা আপনাকে আহবান করবো একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান, শিক্ষকদের মানহানির প্রতিবাদ করুন। আমরা আপনাকে শ্রদ্ধা জানাবো।
অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, আমরা জানতাম কাক কাকের মাংস খায় না। কিন্তু বর্তমানে এ চর্চাটা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমি এ প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে প্রশাসনকে জানাতে চাই, যদি অবিলম্বে এ বহিষ্কারাদেশ ও অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে আমাদের আন্দোলন চলবে, এবং পরবর্তীতে আরো কর্মসূচী আসবে।
অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমি নিজে এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক শিক্ষার্থী আর এখন শিক্ষক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার দরদ একটু বেশিই। কিন্তু আমার এখন মাঝে মাঝে নিজের কর্মস্থানের জন্য ঘৃণা হয়। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম শিক্ষক সমিতি থেকে কোনো লিখিত বক্তব্য আসবে, যেমনটা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দিয়েছিল। কিন্তু সেটা এখনও পেলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যদিও প্রশাসক কিন্তু তিনি তো একজন শিক্ষক। তিনি কিভাবে কয়েকজন শিক্ষকের মানহানি সহ্য করছেন!
এ সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে নোট অব ডিসেন্ট দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন সিন্ডিকেট সদস্য। তারা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা এবং কুয়েটের সাবেক উপাচার্য ও ইউজিসি’র সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এনভারোমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের ড. আব্দুলাহ হারুন চৌধুরী এবং একই ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত, স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক আফরোজা পারভীন, ইংরেজী ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামান, অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, একই ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক তাসনিম মুরাদ মামুন, বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক ইমরান কামাল এবং মৌমিতা রায়।
এছাড়া শিক্ষকদের সাথে সংহতি জানিয়ে আইনজীবী কুদরতি খুদা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্যানেল আইনজীবী মহসীন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানবন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে বরখাস্ত ও অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায় তারা। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মৌখিক আশ্বাসে গত ২৬ তারিখ অনশন থেকে সরে আসার পর আজ আবার প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করেছে ওই দুই শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীরা। তারা বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দুই শিক্ষার্থীর সাজা মওকুফ করা হয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীরা বলছেন মওকুফ নয়, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।
এসময়ে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রশাসন কে বলতে চাই আপনারা দুটি দিয়াশলাই কাঠি নিভিয়েছিলেন তার জন্য দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন জ্বেলে উঠেছে। দ্বিতীয় মেয়াদে এসে আমাদের ভিসি স্বজনপ্রীতি আর নিয়োগ বাণিজ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করেছেন তদন্ত কমিটি তো তার বিরুদ্ধে হওয়া উচিত, তা না করে কেন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে এই বহিষ্কার আদেশ দেওয়া হলো।
শিক্ষার্থী আরিফা সুলতানা বলেন, আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে সমর্থন করার জন্য আমাদের অভিভাবক তুল্য তিন শিক্ষকের উপর খড়গ নেমে এসেছে। তাদের এই শাস্তি ইঙ্গিত দেয় পরবর্তীতে কেউ শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ালে তাদেরকেও বরখাস্ত করা হবে।