সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার পর রোববার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে বনজীবী ও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে সুন্দরবন। দীর্ঘ বিরতির পর সুন্দরবনের ভেতরে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোতে। অনুমতি নিয়ে এদিন থেকে পর্যটক ও বনজীবীরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন সুন্দরবন সংলগ্ন বনজীবী ও ট্যুর অপারেটররা।
দীর্ঘদিন পর আয়-রোজগারের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সুন্দরবনকেন্দ্রিক পেশাজীবীদের মধ্য স্বস্তি ফিরে এসেছে। কেউ নতুন করে জাল বুনছেন, কেউ পুরোনো জাল মেরামত করছেন। আবার কোথাও চলছে নৌকা-ট্রলার প্রস্তুতের শেষ মুহূর্তের কাজ।
বন বিভাগের তথ্য মতে, সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ কারণে গত ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য জেলে ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। রবিবার থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে।
মোংলা ট্যুর অপারেটর মো. এমাদুল হোসেন বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হচ্ছে। টুরিস্টদের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। বুকিং পেলে রবিবার থেকে টুরিস্টদের নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবো। দেশের বিভিন্ন স্থানের বন্যার প্রভাব আমাদের মোংলায় ও পড়বে। কেননা যারা ভ্রমনে আসবেন তাদের অনেকেই এখন বন্যার কবলে। তাই গত বারের তুলনায় এবার যাত্রীর আশংকা খুবই কম।
বনজীবী মাছুম বলেন, আমাদের এলাকার বহু মানুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধ থাকার পর রবিবার নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় জেলেরা বন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাশ পারমিট নিয়ে প্রস্তুত হওয়া শুরু করেছে। রবিবার ভোররাতেই আমরা সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা হব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মো. নূর আলম শেখ বলেন, দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর খুলছে সুন্দরবন। এসময় যেনো কোন বন্য প্রাণী হত্যা না হয়। সুন্দরবনের খালে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন না হয়। আশাকরি চোরা কারবারী যেনো বন্ধ থাকে সে জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকবে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, বনের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা, বন্য প্রাণী এবং নদী-খালের মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনে সকল ধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। আগামী রবিবার নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হবে। রবিবার থেকে বনজীবী ও টুরিস্টরা নিয়ম মেনে অনুমতি সাপেক্ষে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। আমরা বনজীবী ও টুরিস্টদের সকল ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছি।
সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবন জল-স্থলভাগ শুধু জীববৈচিত্র্যেই নয়, মৎস্য সম্পদের আধার। সে কারণে প্রথমে সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় ইন্ট্রিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানিংয়ের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ২০২২ সাল থেকে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩ মাস সময় বৃদ্ধি করে বন মন্ত্রণালয়। এ সময় সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
খুলনা গেজেট/এএজে